নয়াদিল্লি: নির্বাচনী পরিকাঠামো কাজে লাগিয়ে দেশে টিকাকরণের কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্র। আগামী ছয় থেকে আট মাসের মধ্যে ৬০ কোটি করোনা ভ্যাকসিনের ডোজ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা যাবে বলে জানিয়েছেন প্রতিষেধক সংক্রান্ত পরামর্শদাতা কমিটির প্রধান ভি কে পল।


প্রত্যেক ব্যক্তি ২টি করে ডোজ পাবেন। অর্থাৎ, মোট ৩০ কোটি মানুষ প্রথম দফায় টিকাকরণের আওতায় আসবেন। এর মধ্যে ২৬ কোটি মানুষের বয়স ৫০ বা তার বেশি।


১ কোটি রয়েছেন যাঁদের বয়স পঞ্চাশের কম, কিন্তু গুরুতর কো-মর্বিডিটি রয়েছে। এছাড়া, বাকি ৩ কোটি করোনা-যোদ্ধা-- যাঁরা সামনে থেকে সংক্রমণের বিরুদ্ধে মোকাবিলা করছেন।


করোনা টিকার ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে ভারত চারটি প্রতিষেধককে টার্গেট করে এগোচ্ছে। সেগুলি হল কোভিশিল্ড, কোভ্যাক্সিন, জাইডাস ক্যাডিলার জাইকোভ-ডি এবং রাশিয়ার তৈরি স্পুটনিক-ভি।


পল জানিয়েছেন, এই প্রতিষেধকগুলি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে দেশের সাধারণ হিমঘর পরিকাঠামোকে ব্যবহার করা যাবে। কারণ এই টিকাগুলি দুই ডিগ্রি থেকে আট ডিগ্রি তাপমাত্রার মধ্যে সংরক্ষণ করা সম্ভব।


প্রতিষেধকের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য গঠিত পরামর্শদাতা কমিটির প্রধান ভি কে পল বলেছেন, ’’ সিরাম, ভারত, জাইডাস এবং স্পুটনিকের সংরক্ষণে সাধারণ তাপমাত্রার কোল্ড চেন প্রয়োজন। ফলে এই প্রতিষেধকগুলির ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা দেখছি না।‘‘


সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া করোনা টিকা উৎপাদনের নিরিখে বিশ্বে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে। অক্সফোর্ড –অ্যাস্ট্রোজেনেকা জুটির সঙ্গে কোভিশিল্ড প্রতিষেধক তৈরি করছে পুণের এই সংস্থা সিরাম।


ভারত বায়োটেক ও জাইডাস ক্যাডিলা আবার নিজেরাই করোনা প্রতিষেধক উৎপাদন করছে। গত মাসে ভারতের ওষুধ প্রস্ততকারী সংস্থা হেটেরো রাশিয়ার আরডিআইএফের সঙ্গে স্পুটনিক-ভি প্রতিষেধকের ১০০ মিলিয়ন ডোজ তৈরির লক্ষ্যমা্ত্রা নিয়েছে।


ভি কে পল জানিয়েছেন, জরুরি ভিত্তিতে টিকা প্রয়োগের প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র খুব শীঘ্রই পেয়ে যাবে তারা। যদিও সূত্রের খবর কেন্দ্রীয় সরকার এখনও পর্যন্ত প্রতিষেধকের দাম নিয়ে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি বা প্রতিষেধক কেনার জন্য বরাত দেয়নি।


সূত্রের মতে, জরুরি ভিত্তিতে করোনা টিকা ব্যবহারের ক্ষেত্রে তিনটি টিকা অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে। তারা হল, ফাইজার, কোভিশিল্ড ও ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিন।


ফাইজারের টিকা সংরক্ষণের জন্য আল্ট্রা কোল্ড চেনের প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করে নিলেও ভি কে পল জানিয়েছেন এই টিকা দেশে আসতে আরও বেশ খানিকটা সময় লাগবে। হয়ত, ছ'মাস লেগে যাবে। ফলে তার মধ্যে ওই পরিকাঠামো তৈরি করা যাবে বলে তাঁর আশা।
এমনকি মডের্নার ক্ষেত্রেও আল্ট্রা কোল্ড চেনের পরিকাঠামো প্রয়োজন। ওই সংস্থার সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকার কথাবার্তা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন পল।


প্রথম পর্বে যে ৩০ কোটি ভারতবাসীকে টিকা দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে, তাদের অগ্রাধিকার পাবেন স্বাস্থ্যকর্মী, সেনা-পুলিশ, পুরকর্মী ও বয়স্ক ব্যক্তিরা।


করোনা সংক্রমণের নিরিখে বিশ্বে আমেরিকার পরেই রয়েছে ভারত। তবে শনিবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে মৃত্যুহার ১.৪৫ শতাংশ, যা আগের থেকে অনেক কম।