ইরানের ছাবাহারের পরে বাংলাদেশেও একটি বন্দর তৈরির পরিকল্পনা করছে ভারত। ইতিমধ্যেই জাহাজ মন্ত্রকের এক প্রতিনিধি দল ঢাকা ঘুরে এসেছে। শুক্রবার এ কথা জানিয়েছেন জাহাজমন্ত্রী নিতিন গডকড়ী।
মুম্বই থেকে ভি়ডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এক সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন,‘‘এখনই কোন বন্দর নিয়ে আলোচনা চলছে তা বলছি না।
তবে ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য বাড়াতে নয়াদিল্লি একটি বন্দর ও পরিকাঠামো তৈরি করতে চায়। এ নিয়ে কথাবার্তাও এগোচ্ছে।’’
ইরানের ছাবাহার বন্দর নির্মাণের চুক্তি সই হওয়ার পর ভারতের লক্ষ্য এখন বাংলাদেশ এবং মায়ানমারেও একই ভাবে বন্দর তৈরি করা। বন্দরগুলি আপাত ভাবে বাণিজ্যিক হলেও প্রয়োজনে এই এলাকায় দেশের কৌশলগত অবস্থান মজবুত করতেও সেগুলিকে কাজে লাগানো যেতে পারে। বাংলাদেশের মঙ্গলা এবং মায়ানমারের সিতওয়ে বন্দরে বিশাল পরিমাণ ভারতীয় বিনিয়োগ নিয়ে অনেক দিন ধরেই চর্চা চলছে।
ছাবাহারের বাণিজ্যিক লাভের কথা এ দিন ব্যাখ্যা করেছেন গডকড়ী। তিনি জানান, ইরানের ওই বন্দরের কাছেই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি হচ্ছে। সেখানে নালকো কারখানা তৈরি করবে। ইরান ইউনিট প্রতি মাত্র ২ মার্কিন ডলারে গ্যাস দিতে সম্মত হয়েছে। সস্তায় গ্যাস পাওয়া গেলে সেখানেই নালকোর মতো সংস্থা ইউরিয়া তৈরি করবে। সেই ইউরিয়া আনা হবে গুজরাতের কান্ডলা বন্দরে। এর ফলে সারে ভর্তুকির ক্ষেত্রে ৪৫ হাজার কোটি টাকা ভারত সাশ্রয় করতে পারবে বলে গডকড়ী দাবি করেছেন।
জাহাজমন্ত্রী বলেন,‘‘সমুদ্রপথে ছাবাহার থেকে কান্ডলা বন্দরের দূরত্ব মাত্র ৮০০ মাইল। ফলে ওই বন্দর থেকে পারস্য উপসাগর দিয়ে ভারত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বহু গুণ বাড়িয়ে নিতে পারবে।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, আফগানিস্তানে পৌঁছতে পাকিস্তানের মধ্য দিয়ে আর যেতে হবে না। মধ্য এশিয়ার দেশগুলিও ভারতের আরও কাছে চলে আসবে।
বন্দর বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, বাংলাদেশেও সস্তায় গ্যাস পাওয়া যেতে পারে। সে দেশে বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ছে ভারতীয় সংস্থা। এর সঙ্গে বন্দর তৈরি করতে পারলে ভারতীয় সংস্থাগুলি আরও বেশি বাণিজ্য করতে পারবে।
গডকড়ীও জানান, ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বছরে ৬০০ কোটি টন পণ্য সড়কপথে যাতায়াত করে। সেই পণ্য যাতে নদী ও সমুদ্রপথে নিয়ে যাওয়া যায় সেই ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। কলকাতা, হলদিয়া এবং সাগর বন্দর থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে সরাসরি বাণিজ্যের সুযোগ তৈরি হবে।
সেই সূত্রেই গডকড়ী জানান, সাগর বন্দরে ১৪.৫ মিটার পর্যন্ত নাব্যতা মিলতে পারে। এই বন্দরে মুড়িগঙ্গা নদীর উপর রেল-রোড সেতুটি জাতীয় সড়ক উন্নয়ন কর্ত়ৃপক্ষ তৈরি করবে। বন্দর নির্মাণের খরচ রাজ্য, কেন্দ্র এবং বেসরকারি সংস্থার সাহায্যে তোলা হবে।
বন্দর কর্তাদের মতে, ভারত বাংলাদেশে কোনও বন্দর তৈরি করলে তার সুবিধে সরাসরি এ রাজ্য পাবে। কলকাতা-হলদিয়া বন্দরের কারবার বাড়বে।