বেঙ্গালুরু: ভবিষ্যতের মহাকাশ গবেষণায় আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যভেদ ভারতের।

সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি যুগান্তকারী স্ক্র্যামজেট ইঞ্জিনের সফল পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো। এর ফলে, বিশ্বের হাতে গোনা কয়েকটি রাষ্ট্রের তালিকায় চলে এল ভারত।

রবিবার, অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধবন স্পেস সেন্টার থেকে ভোর ৬টা নাগাদ এই পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করা হয়। স্ক্র্যামজেট ইঞ্জিন নিয়ে আকাশে পাড়ি দেয় সলিড রকেট বুস্টার অ্যাডভান্সড টেকনলজি ভেহিকল (এটিভি)।

জানা গিয়েছে, টেস্ট-রকেটের ফ্লাইট টাইম বা আকাশে থাকার সময় ছিল ৩০০ সেকেন্ড। এর পরে রকেটটি শ্রীহরিকোটা থেকে প্রায় ৩২০ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরে পড়ে যায়।

৩০০ সেকেন্ডের মধ্যেই রকেটের বুস্টার স্টেজ, দ্বিতীয় স্টেজে সলিড রকেটের ইগনিশন, স্ক্র্যামজেট ইঞ্জিনের সময়মতো চালু হওয়া এবং সেকেন্ড স্টেজের সমাপ্তি—সবকিছুই পরিকল্পনামাফিক হয়েছে বলে দাবি ইসরোর।

ইসরো জানিয়েছে, প্রথম উৎক্ষেপণেই ‘মাক ৬’ (শব্দের ৬ গুণ) গতি তোলে স্ক্র্যামজেট। উৎক্ষেপণের সময় ওজন ছিল ৩,২৭৭ কিলোগ্রাম। ইসরোর তরফে জানানো হয়, পরীক্ষাটি এতটুকুই ছিল। বলা হয়েছে, উৎক্ষেপণ ছোট হলেও, ভবিষ্যৎ গবেষণার নিরিখে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এদিনের উৎক্ষেপণে কী পরীক্ষা করা হল? ইসরোর তরফে জানানো হয়েছে, এদিন যুগান্তকারী স্ক্র্যামজেট ইঞ্জিনের পরীক্ষা করা হয়েছে। যে কোনও রকেট ইঞ্জিনের প্রয়োজন হয় তরল জ্বালানি এবং অক্সিডাইজারের। অক্সিডাইজার জ্বালানিকে জ্বলতে সাহায্য করে।

অক্সিডাইজার হিসেবে ব্যবহার করা হয় অক্সিজেন। ফলে, প্রচলিত রকেটে উৎক্ষেপণের সময় জ্বালানি ও অক্সিজেন ভরতে হয়। এতে একদিকে যেমন রকেটের ভোট ওজন বেড়ে যায়, তেমনই বহন-ক্ষমতাও কমে যায়।

স্ক্র্যামজেট ইঞ্জিন থেকে অক্সিজেন টেনে নিতে সক্ষম। ফলে, আলাদা করে অক্সিজেন ভরতে হয় না। এতে, রকেটের ভর একদিকে যেমন কমে যায়, তেমনই রকেটের বহন-শক্তি বৃদ্ধি পায়। ফলে, উৎক্ষেপণের মোট খরচ অনেকটাই কমে যায়।

তাই এই ইঞ্জিনকে ‘এয়ার-ব্রিদিং ইঞ্জিন’-ও বলা হয়। বিশ্বে এখনও পর্যন্ত মোট চারটি দেশ এই স্ক্র্যামজেট ব্যবহার করে। বর্তমানে এই ইঞ্জিন পরীক্ষা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (নাসা), রাশিয়া এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ইসরোর এই সফল পরীক্ষায় শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।