নয়াদিল্লি: জম্মু ও কাশ্মীরে এবার কৌশল পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। এবার থেকে সেনা বেশি করে লুকিয়ে করে থাকা জঙ্গি নিকেশ করতে সার্জিক্যাল (দ্রত এবং গোপন) অভিযানেই অংশ নেবে। জনমানসে আর খুব একটা দেখা যাবে না জওয়ানদের।

প্রতিরক্ষামন্ত্রক সূত্রে খবর, দক্ষিণ কাশ্মীরের বিভিন্ন অংশে এখনও প্রায় ১৫০ জন জঙ্গি আত্মগোপন করে রয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় ৯০ জন স্থানীয় জঙ্গি। বাকিরা দক্ষিণ কাশ্মীরের পুলওয়ামা, অনন্তনাগ, কুলগাম এবং শোপিয়ান জেলার।

উপত্যকার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সেনার এলিট জঙ্গিদমন শাখা বলে পরিচিত রাষ্ট্রীয় রাইফেল্স-এর সূত্রে জানা গিয়েছে, এবার থেকে যৌথ অভিযানের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। এতদিন, কোনও অভিযানের পরই পুলিশকে খবর দেওয়া হত। কিন্তু, এবার পুলিশকে সঙ্গে নিয়েই অভিযান চলবে।

সেনাবাহিনী সূত্রে খবর, জওয়ানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, বেশি প্রকাশ্যে না আসতে। পাশাপাশি, এ-ও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কোনও এনকাউন্টারকে যত দ্রুত সম্ভব শেষ করে সেখান থেকে চলে যেতে। বাহিনীর এক শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন, সামরিক অভিযানের পর জওয়ানরা সেখানে থাকবে না। জনমানসের সামনে তাঁদের না আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ওই আধিকারিকের মতে, এই নির্দেশের মাধ্যমে সেনা দুটি বার্তা দিতে চেয়েছে। এক, এবার থেকে গোয়েন্দা-তথ্যের ভিত্তিতে কেবলমাত্র গোপন, ক্ষিপ্র এবং দ্রুত অভিযান করতে হবে। দুই, অভিযানের ‘প্রচার’ করে তার সাফল্যের কৃতিত্ব নেওয়া চলবে না।

সেনার মতে, জনসাধারণকে সামলানোর কথা তাদের নয়। তার প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ তাদের নেই। ফলে, এই বিষয়টি দেখভাল করবে স্থানীয় পুলিশ ও আধা-সামরিক বাহিনীই। সম্প্রতি, শ্রীনগরস্থিত সেনার ১৫ কোর-এর সঙ্গে বৈঠকে বসেন রাজ্য পুলিশ এবং আধা-সামরিক বাহিনীর শীর্ষকর্তারা। সেখানেই স্থির হয় এই নতুন কৌশল।

বাহিনী সূত্রের খবর, এই জঙ্গিদের বেশিরভাগটাই স্থানীয় যুবা। প্রায় ৬ মাস আগে নিরাপত্তা এজেন্সিগুলিকে এই মর্মে সতর্কবাণী পাঠিয়েছিল গোয়েন্দা সংস্থাগুলি। সেখানে বলা হয়েছিল, উপত্যকায় জেহাদের আগুন জ্বালিয়ে রাখতে বেশ কিছু কাশ্মীরি যুবককে নিয়োগ করার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে লস্কর-ই-তৈবার মতো জঙ্গিগোষ্ঠী। উদ্দেশ্য একটাই, যথাসম্ভব নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে লড়াই জিইয়ে রাখা।

তবে, পোড়খাওয়া জঙ্গিদের তুলনায় এই যুবাদের কোনও প্রশিক্ষণ নেই। শুধুমাত্র ভাবাবেগকে কাজে লাগিয়ে এই যুবাদের বিপথে চালিত করে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলি। যার বেশ কিছু উদাহরণ সম্প্রতি মিলেছে। গত সপ্তাহে, দক্ষিণ কাশ্মীরে নিরাপত্তা বাহিনীর কাছ থেকে ৪০টি আগ্নেয়াস্ত্র লুঠ করেছে এই যুবারা। এরমধ্যে ছিল একে-৪৭ রাইফেল, ইনসাস রাইফেল, লাইট মেশিন গান, ম্যাগাজিন এবং প্রচুর গুলি।