লেহ ও নয়াদিল্লি: ফের লাদাখে চিনা সেনার ভারতীয় ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ করার চেষ্টা রুখে দিল সেনা। বাধা পেয়ে ভারতীয় ফৌজের দিকে ইটবৃষ্টি করে চিনা জওয়ানরা। পাল্টা পাথরবৃষ্টি করে ভারতীয় নিরাপত্তাবাহিনীও। দুপক্ষের কয়েকজন আহত।


খবরে প্রকাশ, মঙ্গলবার পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) জওয়ানরা লাদাখের বিখ্যাত প্যাঙ্গং হৃদ লাগোয়া দুটি অঞ্চল— ফিঙ্গার ফোর ও ফিঙ্গার ফাইভ দিয়ে ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশ করার চেষ্টা করে।


জানা গিয়েছে, এই দুজায়গাতেই একবার ভোর ৬টা এবং ফের একবার সকাল ৯টা নাগাদ অনুপ্রবেশ করার চেষ্টা করে চিনা বাহিনী। কিন্তু, প্রতিবারই চিনা আগ্রাসন রুখে দেয় সদাসতর্ক ভারতীয় ফৌজ।


জানা গিয়েছে, চিনা সেনা এগোতেই, ভারতীয় জওয়ানরা তাদের সামনে মানবপ্রাচীর গড়ে তোলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে চিনা বাহিনী ভারতীয় ফৌজকে লক্ষ্য করে পাথরবৃষ্টি শুরু করে। পাল্টা পাথর ছোঁড়ে ভারতও। এতে দুপক্ষের কয়েকজন আহত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।


সেনা সূত্রে খবর, প্রায় ৩০ মিনিট ধরে এই সংঘাত চলে। তবে, পরিস্থিতি বেশি জটিল হওয়ার আগে দুপক্ষই নিয়মমাফিক ব্যানার ড্রিল করে নিজ নিজ জায়গায় ফিরে যায়। নয়াদিল্লিতে সেনার এক মুখপাত্র এই ঘটনা নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি।


সেনা সূত্রে খবর, চিনা সেনা ফিঙ্গার ফোর এরিয়া পর্যন্ত এগিয়ে এসেছিল। এই জায়গার দখল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই দুই দেশের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। কারণ, উভয় দেশই এই অঞ্চলকে নিজেদের বলে দাবি করে আসছে।


নয়ের দশকের শেষের দিকে আলোচনার সময় ভারত এই জায়গার আধিপত্য নিয়ে দাবি করলে, চিন পাল্টা দাবি করে জানায়, এটি আকসাই চিনের অঙ্গ। এমনকী, নিজেদের দখল প্রমাণ করতে এই এলাকায় ফিঙ্গার ফোর পর্যন্ত একটি পাকা রাস্তাও তৈরি করে ফেলে বেজিং। এই ফিঙ্গার ফোর এলাকাটি লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল (এলএসি)-র পাঁচ কিলোমিটার ভেতরে সিরি জাপ অঞ্চল(ভারতীয় দিকে) পর্যন্ত অবস্থিত।


আগে, এই হৃদের উত্তর ও দক্ষিণ পাড়ে চিনা প্যাট্রলিং ভেসেল প্রায়ই আসত। এই হৃদের ৯০ কিলোমিটার চিনা দিকে পড়ছে। আর ৪৫ কিলোমিটার ভারতের দিকে।


কিন্তু, এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অত্যাধুনিক ইন্টারসেপ্টর বোট কিনে ভারত এই জায়গার নিয়মিত নজরদারি চালায়। ওই নৌকাগুলি অত্যন্ত দ্রুতগতির। তাতে লাগানো রয়েছে অত্যাধুনিক রেডার, ইনফ্রা-রেড ও জিপিএস।


প্রসঙ্গত, এর আগেও লাদাখে চিনা সেনা আগ্রাসন ঘটিয়েছে। ২০১৩ সালের মে মাসে লেহ-র দৌলত বেগ ওল্ডি (ডিবিও)-র ডেপসাং উপত্যকায় তিন-সপ্তাহ ধরে দুই সেনার মধ্যে সংঘাতের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল।৪


ডোকালাম-ইস্যুকে কেন্দ্র করে দুদেশের সেনার মধ্যে সার্বিক সংঘাতের পরিবেশে তৈরি হয়েছে, তাতে নিঃসন্দেহে ঘৃতাহুতি দেবে এদিনের ঘটনা বলেই মনে করা হচ্ছে।