বেঙ্গালুরু:  গুজরাতে রাজ্যসভার ভোটের আগে নয়া মোড়। কংগ্রেস বিধায়কদের আশ্রয় দেওয়ায় কর্ণাটকের মন্ত্রী ডি.কে শিবকুমারের বাড়িতে আয়কর হানা। ওই মন্ত্রীরই দিল্লির বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে ৫ কোটি টাকা।

নিজের মন্ত্রীর বিরুদ্ধে আয়কর হানার তীব্র নিন্দা করে কর্নাটকের কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার অভিযোগ, বিজেপি-বিরোধী প্রতিবাদের কন্ঠস্বর স্তব্ধ করে দিতেই এই অভিযান। তবে এই চাপের কাছে মাথা নত করব না। পাল্টা দুর্নীতির অভিযোগে সরব বিজেপি।

কর্নাটকে দলীয় সরকারের মন্ত্রীর বিরুদ্ধে আয়কর হানার প্রতিবাদে সংসদে হইচই করেন কংগ্রেস সদস্যরা। তবে সংসদের উভয় কক্ষে বিরোধী শিবিরের দাবি উড়িয়ে ওই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে আয়কর হানার সঙ্গে গুজরাতের রাজ্যসভা নির্বাচনের কোনও যোগ নেই বলে জানান কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি।

তাঁর এও দাবি, কর্নাটকের যে রিসর্টে কংগ্রেস বিধায়কদের রাখা হয়েছে, সেখানে কোনও তল্লাসি অভিযান হয়নি। তবে যে মন্ত্রী ওই রিসর্টে 'গিয়ে ঘাঁটি গেড়েছিলেন', তাঁকে সেখান থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।

তবে তাঁর বক্তব্যে তীব্র শোরগোল তুলে রাজ্যসভায় তিনবার অধিবেশন মুলতুবি করতে বাধ্য করেন, লোকসভা থেকেও ওয়াকআউট করেন কংগ্রেস সদস্যরা। সরকার সিবিআই, ইডি, আয়করের মতো এজেন্সির অপব্যবহার করছে বলে দাবি করেন তাঁরা। জেটলি বলেন, সঠিক না অন্যায় উদ্দেশ্যে, সেটা অভিযানের প্রাপ্তির ওপর নির্ভর করে। এই রিসর্টে নয়, অন্য ৩৯টি জায়গায় তল্লাসি হয়েছে বলে জানিয়ে তিনি গুজরাতে রাজ্যসভা ভোটের সঙ্গে একে মেলানো উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন।

প্রসঙ্গত,  বেঙ্গালুরুতে ওই মন্ত্রীর তত্ত্বাবধানেই ছিলেন গুজরাত থেকে উড়িয়ে আনা ৪২ কংগ্রেস বিধায়ক। তাঁরা থাকছিলেন এগলেটন গল্ফ রিসর্টে। সেখানে বুধবার সকালে আচমকা হানা দেয় আয়কর আধিকারিকরা। জানা গিয়েছে, আজ সকালে প্রায় ৩৯ টি জায়গায় হানা দিয়েছে আয়কর প্রতিনিধিরা ।  ডিকে শিবাকুমারের কানাকাপুরার বাড়িতেও হানা দেয় আয়কর আধিকারিকরা। এদিকে এই ঘটনার পরই কর্ণাটকের ওই মন্ত্রীর সঙ্গে ফোন করে কথা বলেন কংগ্রেস সহ সভাপতি রাহুল গাঁধী।

গুজরাতের কংগ্রেস বিধায়কদের আশ্রয় দেওয়ার জন্যেই মন্ত্রীর বাড়িতে হানা বলে, যখন কংগ্রেসের তরফে দাবি করা হয়েছে, তখন আয়কর আধিকারিকদের দাবি, মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ ছিল। সেইজন্যেই এই তদন্ত। এবছর মার্চেই আয়কর দফতরের তরফে মন্ত্রী ডি.কে শিবাকুমারকে তলব করা হয়, কারণ কংগ্রেস এমএলসি গোবিন্দ রাজুর ডায়েরিতে তাঁর নাম পাওয়া যায়। সেইসময় আয়কর আধিকারিকদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন মন্ত্রী, কিন্তু তাঁর জবাবে খুশি হননি আধিকারিকরা।

প্রসঙ্গত, আগামী ৮ তারিখ রয়েছে গুজরাতের রাজ্যসভা নির্বাচন।   সেই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে এখন দড়ি টানাটানি তুঙ্গে। সেখানে কংগ্রেসের হয়ে লড়াইয়ে নেমেছেন আহমেদ পটেল। ওদিকে বিজেপির হয়ে ময়দানে পা রেখেছেন স্মৃতি ইরানি এবং অমিত শাহ। এদিকে কংগ্রেসের অভিযোগ আহমেদ পটেলকে হারাতে দলের মধ্যে ভাঙন সৃষ্টির লক্ষ্যে, গুজরাতে কংগ্রেস বিধায়কদের মধ্যে আচমকাই দল ছাড়ার প্রবণতা দেখা যায়। সেই দলত্যাগ ঠেকাতেই গত শনিবার ধাপে ধাপে বেশ কিছু বিধায়ককে বেঙ্গালুরু উড়িয়ে আনে কংগ্রেস।

এই আয়কর হানা প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেতা সঞ্জয় নিরুপমের দাবি, পটেলকে হারাতে বিজেপি সভাপতি সবধরনের অস্ত্রই ব্যবহার করছেন। এবার আয়কর দফতরকে ব্যবহার করে তাঁদের দলের নেতা-মন্ত্রীদের হেনস্থা করা হচ্ছে।