চেন্নাই: ষাঁড়ের সঙ্গে লড়াইয়ের দাবিতে তামিল জনতার আন্দোলন অব্যাহত। রাজ্যে চলছে বনধ, হাজার হাজার মানুষ মেরিনা বিচে বসে তাঁদের জাল্লিকাট্টু খেলার অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি করছেন। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য চেষ্টা করছে, কেন্দ্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দ্রুত অর্ডিন্যান্স জারি করে মানুষকে শান্ত করতে।


তামিল জনতার কাছে জাল্লিকাট্টু শুধু খেলা নয়, একটা আবেগ। বিশ্বনাথন আনন্দ থেকে রবিচন্দ্রন অশ্বিন, রজনীকান্ত, এ আর রহমান, ধনুষ- সব নামজাদা তামিল তারকা এই খেলার সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন। ৫দিন ধরে লাখো মানুষ এই প্রাচীন খেলার পুনরাধিকার চেয়ে নেমেছেন অহিংস আন্দোলনে। তাঁরা জানিয়ে দিয়েছেন, অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে জাল্লিকাট্টু চালুতে তাঁদের আপত্তি নেই কিন্তু যতক্ষণ না জাল্লিকাট্টুর নিজস্ব জায়গা আলানগানালুরে এই খেলা শুরু হচ্ছে, ততক্ষণ আন্দোলন থামবে না। একইসঙ্গে তাঁদের দাবি, নিষিদ্ধ করতে হবে আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পেটাকে, যাদের কারণে বন্ধ হয়েছে জাল্লিকাট্টু।



অর্ডিন্যান্সের ব্যাপারে আলোচনা করতে কাল দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী ও পনীরসেলভাম। আজ সকালে তিনি জানিয়েছেন, দুএকদিনের মধ্যে অর্ডিন্যান্স জারি করে রাজ্যবাসীকে জাল্লিকাট্টুর অধিকার ফিরিয়ে দেবেন তাঁরা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ইতিমধ্যেই এই অর্ডিন্যান্সে ছাড়পত্র দিয়েছে। রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর হয়ে গেলে রাজ্যপাল তা জারি করবেন।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহও জানিয়েছেন, জাল্লিকাট্টুর পথ থেকে যত দ্রুত সম্ভব সমস্ত বাধা দূর করার চেষ্টা করছে কেন্দ্র।

কিন্তু যে যাই বলুন, জাল্লিকাট্টু শুরু না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনের রাস্তা থেকে এক চুল সরতে রাজি নয় তামিল জনতা। মেরিনা বিচের পাশে কামারাজার সালাই এলাকায় প্রতি মুহূর্তে যোগ দিচ্ছেন শয়ে শয়ে বিক্ষোভকারী। সম্পূর্ণ অহিংসভাবে, শান্তি বজায় রেখে চলছে বিক্ষোভ। পরিস্থিতি সামাল দিতে মোতায়েন হওয়া পুলিশকর্মীদেরও সমর্থন বিক্ষোভকারীদের দিকে।

বস্তুত জাল্লিকাট্টুর দাবিতে গোটা তামিলনাড়ুই এখন এক ছাতার তলায়। সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে সিনেমা হলগুলি, দোকান বন্ধ রেখেছেন বস্ত্র ব্যবসায়ীরা। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির কাজকর্মও আজকের জন্য বন্ধ। রাস্তাঘাট পুরোপুরি ফাঁকা হলেও কয়েকটি গরুর গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে, ষাঁড়ের সঙ্গে লড়াইয়ের প্রতীক হিসেবে। এমনকী এক ছাত্র আত্মহত্যারও চেষ্টা করেছেন।

চেন্নাই রেল স্টেশনে রেল রোকো করতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছেন হাজারদুয়েক ডিএমকে কর্মী। দক্ষিণ তামিলনাড়ুতে সমস্ত সিনেমা হল, দোকানপাট বন্ধ। বন্ধ স্কুল, কলেজ, হোটেল, রেস্তোঁরা। সাধারণ কৃষকই হোন বা চিকিৎসক, আইনজীবী, অন্যান্য পেশায় থাকা মানুষ- সকলে যোগ দিয়েছেন এই আন্দোলনে। এমনকী রমানাথাপুরম, নাগাপাত্তিনম ও কন্যাকুমারীর মৎস্যজীবীরাও বাদ যাননি।