বেঙ্গালুরু: দিনভর টানটান নাটকের অবসান। আস্থাভোটে নামার আগেই ইস্তফা বি এস ইয়েদুরাপ্পার। সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে প্রয়োজনীয় শক্তি শেষ পর্যন্ত জোগাড় না হওয়ায় কর্নাটক বিধানসভায় ভাষণ দিয়ে আস্থা প্রস্তাব পেশ করেও সরে দাঁড়ালেন বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী। ফলে তিনদিনের বিজেপি সরকারের পতন হল।
শক্তি সংগ্রহ করতে না পারলে তিনি পদত্যাগ করবেন, এমন ইঙ্গিত ছিলই। আস্থাভোটে জয় হবেই বলে আগাগোড়া দাবি করে এলেও শেষ পর্যন্ত বাড়তি সাত বিধায়কের সমর্থন জোগাড় হয়নি বিজেপির।


 



বুধবার কংগ্রেস-জেডি (এস) জোট সরকার শপথ নিচ্ছে। সন্ধ্যায় রাজভবনে যান জেডি (এস) নেতা এইচ ডি কুমারস্বামী। রাজ্যপাল বজুভাই ভালার সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে সাংবাদিকদের তিনি জানান, তাঁদের সরকার গড়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন রাজ্যপাল। সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে ১৫ দিন সময় দিয়েছেন। তবে তার অনেক আগেই আমরা সংখ্যগরিষ্ঠতা প্রমাণ করব। নতুন সরকার ২১ মে সোমবার শপথ নেবে। আজ বিজেপি সরকার সভায় সংখ্যার প্রমাণ দিতে পারেনি। তার ভিত্তিতেই রাজ্যপাল আমাকে সরকার গড়তে ডেকেছেন। যদিও সোমবার শপথগ্রহণ করার কথা জানালেও, পরে কংগ্রেসের অনুরোধে এই অনুষ্ঠান পিছিয়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন কুমারস্বামী। বুধবার শপথগ্রহণ করবেন তিনি।

জোটের দাবি, তাদের পক্ষে আছেন ১১৭ জন এমএলএ।

গতকালই সুপ্রিম কোর্ট আজ বিকাল ৪টায় আস্থাভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে বলেছিল ইয়েদুরাপ্পাকে। রাজ্যপাল বজুভাই ভালা তাঁকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথবাক্য পাঠ করিয়ে তাঁকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে ১৫ দিন সময় দিয়েছিলেন। কিন্তু শীর্ষ আদালত এত দেরি করতে  চায়নি।

ইয়েদুরাপ্পা এক লাইনের আস্থা প্রস্তাব পেশ করেন। তাতে বলা হয়, এই সভা বি এস ইয়েদুরাপ্পার নেতৃত্বাধীন মন্ত্রি পরিষদে আস্থা প্রকাশ করছে। ভাষণে ইয়েদুরাপ্পা বলেন, মানুষ কংগ্রেস ও জেডি এস-কে ভোটে প্রত্যাখ্যান করলেও ওরা ব্যাপক জনাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে সুবিধাবাদী জোট করেছে। তবে আমি আস্থাভোটের মুখোমুখি হচ্ছি না। ইস্তফা দিচ্ছি। রাজভবনে গিয়ে ইস্তফাপত্র পেশ করব। তিনি এবার 'মানুষের কাছে যাবেন' বলেও জানান ইয়েদুরাপ্পা।
# আমাদের কোনও তাড়া নেই। রাজ্যপালের আমন্ত্রণের অপেক্ষায় রয়েছি। ইয়েদুরাপ্পার ইস্তফার পর সরকার গঠনের ব্যাপারে মন্তব্য জেডি (এস)নেতা এইচ ডি কুমারস্বামীর।

# প্রয়োজন ১১০ বিধায়কের সমর্থন। বিজেপির আছে ১০৪ জন।

# কর্নাটকে সকাল থেকে শুরু টানটান নাটক অব্যাহত রয়েছে। আর মাত্র ২ ঘন্টা বাদে শুরু হবে আস্থাভোট যাতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে হবে বি এস ইয়েদুরাপ্পাকে।
# কংগ্রেস নেতা ডি কে শিবকুমারের দাবি, যে দুই দলীয় বিধায়ক বেপাত্তা ছিলেন বলে শোনা যাচ্ছিল, তাঁরা তাঁদের সঙ্গেই আছেন। আনন্দ সিংহ, প্রতাপ গৌড়া নামে ওই দুজন বিধানসভায় পৌঁছেও গিয়েছেন।

# শোনা যাচ্ছে, জেডিএসের ৩৮ বিধায়কের সকলেই বিধানসভায় রয়েছেন। এর আগে খবর ছড়ায়, তাদের ২ বিধায়কের খোঁজ মিলছে না।

# এপর্যন্ত ১৯৫ জন বিধায়ক শপথ নিয়েছেন।

# একটি সূত্রের দাবি, সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি জোগাড় করে উঠতে পারেনি বিজেপি। যদিও চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। হাল ছেড়ে দেননি বিজেপির ম্যানেজাররা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সাফল্য না এলে ইয়েদুরাপ্পা আস্থাভোটের আগেই পদত্যাগ করতে পারেন। টিভি ফাইভের খবর, তিনি নাকি ১৩ পৃষ্ঠার ভাষণও তৈরি করে রেখেছেন।

# কংগ্রেসের অভিযোগ, তাদের বিধায়ক বি সি পাটিলকে ঘুষ দিয়ে দলবদলের অফার দিয়েছেন স্বয়ং ইয়েদুরাপ্পা। এ ব্যাপারে তারা একটি অডিও টেপও প্রকাশ করেছে।

​# গতকাল কংগ্রেসের আরেক বিধায়ক বাসবানাগৌড়া দাদ্দালকেও ১৫০ কোটি টাকার অফার করা হয়েছে বলে গতকাল শোনা যায়। কংগ্রেসের দাবি, দাদ্দালকে ঘুষের প্রস্তাব দিয়েছেন রেড্ডি ভাইদের একজন জনার্দন রেড্ডি।

কী করবেন কংগ্রেস-জেডিএসের লিঙ্গায়ত বিধায়করা? এই প্রশ্নের এখন উত্তর খুঁজছে কর্নাটক। বিজেপি নেতাদের ধারণা, নিজেদের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে দু’দলের বিধায়করাই ভোট দেবেন ইয়েদুরাপ্পা সরকারের পক্ষে, যাতে লিঙ্গায়ত সম্প্রদায়ের ক্ষোভের মুখে পড়তে না হয়।

কংগ্রেসের লিঙ্গায়ত বিধায়ক ১৮ জন, জেডিএসের ২ জন। বিজেপির বক্তব্য, লিঙ্গায়ত সম্প্রদায়কে ভিন্ন ধর্ম সম্প্রদায় আখ্যা দিয়ে কংগ্রেস ঠিক বিধানসভা ভোটের আগে যে পাশা খেলে, তা উল্টে এসে ঘর পুড়িয়েছে তাদেরই। লিঙ্গায়তরা ক্ষেপে উঠেছেন, পাশাপাশি ক্ষমতার জন্য ভোটের পর লিঙ্গায়ত বিরোধী বলে পরিচিত জেডিএসের সঙ্গে হাত মেলানোও ভাল চোখে দেখছেন না তাঁরা। বি এস ইয়েদুরাপ্পা লিঙ্গায়তদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয়, তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী না হতে দেওয়ার জন্য এই চেষ্টার খেসারত আস্থাভোটে কংগ্রেসকে দিতে হবে।

বিজেপির ধারণা, মূলত উত্তর কর্নাটকের কংগ্রেস বিধায়করা ইয়েড্ডিকে ভোট দিতে পারেন। তাঁরা মনে করছেন, আস্থাভোটে কংগ্রেস জিতে গেলেও আগামী বছর লোকসভা ভোটে জনসমর্থন বিপুলভাবে ইয়েড্ডির পক্ষে যাবে। পাশাপাশি কংগ্রেস-জেডিএস সরকার গড়লে লক্ষ্যণীয়ভাবে বেড়ে যাবে মাঝপথেই সরকার পড়ে গিয়ে ফের ভোট হওয়ার সম্ভাবনা, কারণ দু’দলের মধ্যে বিশ্বাসের ভালরকম অভাব। আস্থাভোটের সঙ্গে সঙ্গে স্পষ্ট হয়ে যাবে গোটা পরিস্থিতি।

আস্থাভোটের আগেই বিধানসভায় ইস্তফা ইয়েদুরাপ্পার, কর্নাটকে বুধবার শপথ কং-জেডি(এস) সরকারের, জানালেন কুমারস্বামী।