নয়াদিল্লি: যুবক, যুবতীদের মধ্যে প্লেটোনিক প্রেম থাকলেও কেরলে ইদানীং ভিন ধর্মে বিয়ে হলেই তাকে 'লাভ জেহাদ' বা 'ঘর ওয়াপসি' বলে চিহ্নিত করার যে প্রবণতা তৈরি হয়েছে, তার নিন্দা করল কেরল হাইকোর্টের এক ডিভিশন বেঞ্চ।
এ ব্যাপারে একটি হেবিয়াস কর্পাস পিটিশনের নিষ্পত্তি করে বেঞ্চ বলেছে, আমরা এতে বিস্মিত।


আদালত সাবধান করেছে, প্রতিটি ভিনধর্মের বিয়েকেই ধর্মের প্রেক্ষাপট থেকে বিচার করা ও ঈশ্বরের আপন দেশ কেরলে বিরাজমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ভাবনায় ফাটল তৈরি করা ঠিক নয়।

কেরলে সাম্প্রতিক কালে জোর করে ধর্মান্তর ঘটানো ও পুরনো ধর্মে ফেরানোর নিন্দা করে বেঞ্চের কঠোর নির্দেশ, হিন্দু থেকে মুসলিম বা মুসলিম থেকে হিন্দু বা খ্রিস্টান, ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর খাটিয়ে কারও ধর্ম বদল করলেই পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে তার সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুন্ন না হয়।

বেঞ্চ উল্লেখ করেছে, সংবিধানের ২৫ (১) অনুচ্ছেদে দেশের প্রত্যেক নাগরিকের নিজের পছন্দমতো ধর্মীয় বিশ্বাস পালন, অনুসরণ ও প্রচারের অধিকার সুনিশ্চিত করা হয়েছে। কোনও ধর্মীয় সংগঠন বা বিভেদকামী শক্তি সেই অধিকার খর্ব করতে পারে না।

জনৈক আনিস আহমেদের পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে এহেন অভিমত জানায় আদালত। কান্নুরের এই যুবকের দাবি, কলেজে পড়ার সময় তাঁর সঙ্গে প্রেম হয়েছিল বান্ধবী শ্রুতির, ঘটনাচক্রে যিনি হিন্দু। গত ১৬ আগস্ট শ্রুতি বাবা-মায়ের বাড়ি ছেড়ে তাঁর সঙ্গে দিল্লি চলে যান। শ্রুতির বাবার দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১৬ জুন পুলিশ তাঁদের দুজনকে হেফাজতে নিয়ে কান্নুরের পায়ান্নুরের আদালতে পেশ করে। আদালতের নির্দেশে শ্রুতিকে তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। শ্রুতির বাবা-মা তাঁকে আনিসের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে, সম্পর্ক ভেঙে দিতে বোঝানোর জন্য ত্রিপুন্নিথুরার এক যোগ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নিয়ে যায়।

আনিসের আর্জি, আদালত শ্রুতিকে তাঁর কাছে ফিরিয়ে দিতে নির্দেশ দিক।

কেরল হাইকোর্ট শ্রুতির মুক্তির নির্দেশ দিয়ে জানিয়েছে, প্রেমিকযুগলই নিজেদের ভবিষ্যত্ স্থির করবে, বাবা-মা বা অন্য কারও ওদের ব্যাপারে নাক গলানো চলবে না, পুলিশকে এটা সুনিশ্চিত করতে হবে। পোস্ট গ্র্যাজুয়েট শ্রুতিকে আটকে রাখতে পারবেন না বাবা-মা।

বেঞ্চের অভিমত, অনীশের সঙ্গে শ্রুতির দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিল, যা শেষ পর্যন্ত বিবাহে পরিণত হয়েছে। শ্রুতিকে অনীশের বৈধ স্ত্রীর স্বীকৃতি দিয়ে সার্টিফিকেটও দিয়েছেন ম্যারেজ অফিসার।

শ্রুতি যে 'বিরল' সাহস দেখিয়ে পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছেন, তার প্রশংসা করে আদালত তাঁর বাবা-মায়ের নিন্দা করেছে তাঁরা ন্যয় প্রতিষ্ঠার পথে আইনি বাধা সৃষ্টি করেছেন বলে।