কেরল: ৬ আগস্টের সেই কাল রাত্রি। তারপর থেকে মুন্নারের পীটিমুন্ডিতে প্রায় প্রতিদিন আসছেন শন্মুঘানাথন। ২৩ কিমি দূরত্বে পেরিয়ে। মাটি ধসের ধ্বংসস্তুপ হাতড়ে খুঁজছেন ২৩ বছরের ছেলের দেহ। পীটিমুন্ডিতে ৬ আগস্টের সেই ভয়াবহ বিপর্যয়ে ৭০ জনের বেশি ধ্বংসস্তুপে চাপা পড়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন। তারপর থেকে প্রায় প্রতিদিন আসছেন শন্মুঘানাথন। তিনি বলেছেন, পাথর ও মাটির স্তুপের নিচে তাঁর ছেলে কোথাও হয়ত শান্তিতে ঘুমিয়ে রয়েছে তাঁর ছেলে। একদিন না একদিন ছেলের দেহের হদিশ পাবেন, এমনটাই আশা শন্মুঘানাথনের।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ৬ অগাস্টের সেই ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ৭২ জন নিখোঁজ হয়েছিলেন। উদ্ধারকারী দল ৬৬ জনের দেহ উদ্ধার করেছে। তল্লাশির কাজে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার করেও বাকি চারজনের দেহের হদিশ মেলেনি। গত ২৫ অগাস্ট উদ্ধার অভিযান বন্ধ করে দেওয়া হয়।
কিন্তু শন্মুঘানাথন বলেছেন, তিনি ছেলের খোঁজ চালিয়ে যাবেন, অন্তত আগামী বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত।
মৃত্যুর ৪১ দিন পেরিয়ে গেলেও ছেলের এখনও শেষকৃত্য সম্পন্ন করেননি তিনি। এ ব্যাপারে শন্মুঘানাথন বলেছেন, ছেলের দেহ খুঁজে না পেলে পারলৌকিক প্রক্রিয়া কীভাবে করব। ছেলের দেহ খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত আমি তো ঘুমোতেও পারব না।
শুধু বড় ছেলে দীনেশ কুমারকেই নয়,শন্মুঘানাথন হারিয়েছেন তাঁর দ্বিতীয় সন্তান ১৯ বছরের নিতিশকুমারকেও।
শন্মুঘানাথন ও তাঁর স্ত্রী মঞ্জুলার এক কন্যা সহ তিন সন্তান। তাঁরা পীটিমুন্ডির বাসিন্দা নন। কেরলা গ্রামীন ব্যাঙ্কের ক্যাশিয়ার শন্মুঘানাথন মুন্নারের এমজি কলোনিতে থাকেন। গত ৪ আগস্ট এক আত্মীয়র বাড়িতে একজনের জন্মদিন পালন অনুষ্ঠানের জন্য পীটিমুন্ডিতে এসেছিলেন তাঁর দুই ছেলে দীনেশ ও নিতিশ। এখানে এলে দু-চারদিন কাটিয়ে যেতেন দীনেশ ও নিতিশ। এবার আর ফিরতে পারলেন না। ৬ অগাস্ট মাটি ধসের শিকার হলেন তাঁরা।
দীনেশ তামিলনাড়ুর একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে স্নাতক স্তরের পড়াশোনা সম্পূর্ণ করেছিলেন। নিতিশ কেরলেরই একটি কলেজের ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুুয়া।
দুর্ঘটনার পর অনেক তল্লাশি চালিয়ে নিতিশের দেহ উদ্ধার হয়। কিন্তু দীনেশের দেহ পাওয়া যায়নি। সেজন্যই এখন প্রায় প্রতিদিনই পীটিমুন্ডিতে আসেন শন্মুঘানাথন, যাতে কোনওভাবে হদিশ মেলে ছেলের দেহের। বাড়িতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকেন স্ত্রী ও মেয়ে বৈষ্ণবী।
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছেন, ছেলের দেহ উদ্ধারের ব্যাপারে শন্মুঘানাথনকে সব ধরনের সহায়তা করা হচ্ছে। কিন্তু তাঁর ছেলের দেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।