খাণ্ডাওয়ালি ও চন্ডিগড়: আজ খুশির ইদ। প্রায় একমাসের কঠিন উপবাসব্রতের পর আকাশে বাঁকা চাঁদ এনে দিয়েছে খুশির সওগাত। কিন্তু হরিয়ানার খান্ডাওয়ালি গ্রামে উত্সবের রেশ নেই কোথাও। একটা অপরিসীম শূন্যতা, শোক, মনখারাপ গ্রাস করেছে জুনেদের গ্রামকে। জুনেদ। ১৬ বছরের কিশোর। ইদের কেনাকাটা করে দিল্লি থেকে মথুরাগামী ট্রেনে চেপে গ্রামে ফিরছিল দাদা ও আরও দুই সঙ্গীর সঙ্গে। তারপর কী যে হয়ে গেল! একদল উন্মত্ত দুষ্কৃতী হামলা চালিয়েছিল তাদের ওপরর। দাদা হাসিমের কোলেই লুটিয়ে পড়েছিল জুনেদের নিথর শরীরটা। হাসিম ভেবে উঠতেই পারছেন না, ভাইকে ছাড়া তিনি কীভাবে ইদের উত্সবে সামিল হতে পারেন!


রাজধানী লাগোয়া গ্রামে জুনেদের পরিবার ও প্রতিবেশীরা ঘরের ছেলের নৃশংস হত্যার ঘটনার শোক সামলে উঠতে পারছে না। কিন্তু ইদ তো এসেছে নিয়ম মতো। কিন্তু ইদের মানেটাই তো মলিন হয়ে উঠেছে গ্রামবাসীদের কাছে। কালো ব্যান্ড হাতে বেঁধে নমাজ পড়েছেন এলাকার মুসলিমরা। আতঙ্কিত গ্রামবাসীদের প্রশ্ন, এ ভাবে পিটিয়ে মারা কবে শেষ হবে!

জুনেদের পরিবারকে পাঁচ লক্ষ টাকার চেক দিয়েছে রেডক্রস। ওয়াকফ বোর্ড চেয়ারম্যান ৫ লক্ষ টাকা ও জুনেদের এক ভাইকে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

কিন্তু এ সবই অর্থহীন জুনেদের বাবা জালালুদ্দিনের কাছে। ৫৫ বছরের জালালুদ্দিন বলেছেন, ইদের সেই আনন্দ আর কোনওদিন ধরা দেবে না তাঁর ও পরিবারের কাছে।

জুনেদের দাদা ২০ বছরের হাসিম বারবার ডুকরে কেঁদে উঠছেন। তার মনে সর্বদাই ভেসে উঠছে গত বৃহস্পতিবারের সেই নির্মম ঘটনার দুঃসহ স্মৃতি। হাসিম বলছেন, এটা তো ঠাণ্ডা মাথায় খুন। হঠাত্ করেই ২০-২৫ জনের একটা দল ওখলা স্টেশনে ট্রেনে উঠে জুনেদকে ধাক্কা মারে। আসন থেকে নিচে পড়ে যায় জুনেদ।

পুলিশ দাবি করেছে, আসনে বসা নিয়ে ঝামেলার জেরেই এই খুন। মানতে নারাজ হাসিম ও জালালুদ্দিন। তাঁদের দাবি, এটা বিদ্বেষের ঘটনা।

জালালুদ্দিন বলেছেন, নমাজ পড়লেও আজ কোনও উত্সব পালন হচ্ছে না গ্রামে। ছেলের খুনিদের চরম শাস্তি দাবি করেছেন তিনি। জুনেদের বাবা আরও বলেছেন, সরকারের কোনও আধিকারিক এখনও পর্যন্ত তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে আসেননি। সরকার ঘটনার নিন্দা করেছে, এমনটাও এখনও পর্যন্ত জানতে পারেননি তাঁরা।

এরইমধ্যে হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খাট্টার জুনেদকে পিটিয়ে খুনের ঘটনার নিন্দা করেছেন। ঘটনায় জড়িত বাকি দুষ্কৃতীদের ধরার চেষ্টা চলছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

ঘটনার পরপরই মুখ্যমন্ত্রী কোনও নিন্দা বা শোকসন্তপ্ত পরিবারকে কোনও বার্তা না দেওয়ায় বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। অবশেষে মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী।