দেহরাদুন: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি সংস্থায় মোটা মাইনের চাকরি, আইআইএম ইনদওরে পড়ার সুযোগ ছেড়ে দিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে অফিসার হিসেবে যোগ দিলেন এক দিনমজুরের ছেলে। তাঁর নাম বর্ণনা ইয়াদাগিরি। এই সেনা অফিসারের বাবা বর্ণনা গুন্নায়া কিছুদিন আগে পর্যন্তও হায়দরাবাদের একটি সিমেন্ট কারখানায় কাজ করতেন। প্রতিদিন তাঁর মজুরি ছিল মাত্র ১০০ টাকা। ছেলেকে সেনা অফিসারের পোশাকে দেখে চোখের জল আটকাতে পারেননি গুন্নায়া। তিনি এখন গর্বিত বাবা।

ছোটবেলা থেকেই চরম দারিদ্র্যের মধ্যে দিন কাটিয়েছেন ইয়াদাগিরি। তা সত্ত্বেও তিনি নিজের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হননি। অনেক কষ্ট করে হায়দরাবাদের ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ইনফরমেশন টেকনলজি থেকে তিনি সফটঅ্যয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন। এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিয়ন প্যাসিফিক রেল রোড সংস্থায় চাকরি পেলেও, সেখানে যোগ দেননি ইয়াদাগিরি। তিনি কমন অ্যাডমিশন টেস্টে ৯৩.৪ শতাংশ নম্বর পেয়ে আইআইএম ইনদওরে পড়ার সুযোগ পান। কিন্তু সেখানেও যোগ দেননি। কারণ, তাঁর লক্ষ্য ছিল সেনা অফিসার হওয়া। সেই লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। দেহরাদুনের সেনা অ্যাকাডেমি থেকে অফিসার হয়েছেন ইয়াদাগিরি।

ভারতীয় সেনার এই অফিসার বলেছেন, 'আমার বাবা খুব সাধারণ মানুষ। তিনি জানতেন, আমি সৈনিক হিসেবে সেনাবাহিনীতে যোগ দিচ্ছি। সেই কারণে তিনি বলেছিলেন, আমি বিশাল অঙ্কের বেতনের চাকরি ছেড়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে ভুল করছি। একসময় আমার বাবা কঠোর পরিশ্রম করে রোজ ৬০ টাকা পেতেন। সংসারের খরচ চালানোর জন্য পোলিও আক্রান্ত মা অফিসের টেবল মুছতেন। আমি কর্পোরেট জগতে প্রবেশ করে অনেক টাকা রোজগার করতে পারতাম। কিন্তু তাতে আমার হৃদয় সায় দেয়নি। দেশের জন্য কাজ করে যে মানসিক তৃপ্তি পাওয়া যায়, টাকা কোনওদিন তার বিকল্প হতে পারে না।'

সেনা অ্যাকাডেমির টেকনিক্যাল গ্র্যাজুয়েট কোর্সে অর্ডার অব মেরিটে প্রথম হয়ে রুপোর পদক পেয়েছেন ইয়াদাগিরি। তিনি সেনার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে যোগ দিচ্ছেন। কঠোর পরিশ্রম করা তাঁর জন্মগত অভ্যাস। সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার স্বপ্ন পূরণ হওয়ার পর এবার তিনি প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে গবেষণা ও উন্নতির মাধ্যমে দেশকে গর্বিত করতে চান।