নয়াদিল্লি:  নোট বাতিলের পর আর্থিক বৃদ্ধির চাকা গতি হারিয়েছে। চিনের থেকে পিছিয়ে পড়েছে ভারত। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম বলেছেন, দ্রুততম আর্থিক বৃদ্ধির দাবি করে সরকারের বুক চাপড়ানো আপাতত বন্ধ থাক। আগে আগামী ১০ বছর ধরে টানা তেজি বৃদ্ধির হার বজায় রেখে তবেই ছাতি চাপড়ানো যেতে পারে।


সংবাদসংস্থা পিটিআইয়ে দেওয়া সাক্ষাত্কারে রাজন বলেছেন, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের মতো বিষয় নিয়ে সারা বিশ্বকে ভারত জ্ঞান দিতে পারে। কিন্তু আর্থিক বৃদ্ধির ব্যাপারে এখনও অনেকটা পথ পেরোতে হবে ভারতকে। মোট অভ্যন্তরীন উত্পাদন (জিডিপি)-এর  হার ১০ বছর ধরে ৮০১০ শতাংশ রাখলে তবেই বিশ্বের সামনে মুখ খুলতে পারবে ভারত।

গত বছরের এপ্রিলে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তত্কালীন গভর্নর রাজন বলেছিলেন, ভারতের আয়বৃদ্ধি তথা অর্থনৈতিক অগ্রগতি মন্দ নয়, তবে তা নিয়ে উচ্ছ্বসিত হওয়ার কিছু নেই। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনীতির হাল  খারাপ হওয়ার জন্যই তা এতটা ভালো দেখাচ্ছে। অবস্থাটা অনেকটা অন্ধের দেশে একচক্ষু রাজার মতো।   তাঁর এই মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক দানা বেঁধেছিল। ক্ষমতাসীন বিজেপি দলের সাংসদ সুব্রহ্মন্যম স্বামী তাঁর অপসারণের দাবি করেছিলেন। তিনি দাবি করেছিলেন, রাজন মানসিক দিক থেকে সম্পূর্ণভাবে ভারতীয় নন।

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর হিসেবে তাঁর মেয়াদ বাড়ায়নি মোদী সরকার। গত দু দশকের মধ্যে তিনিই প্রথম গভর্নর যাঁর মেয়াদ দ্বিতীয় দফায় বাড়ানো হয়নি।

স্বামীর ওই মন্তব্য নিয়ে অবশ্য মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর। তিনি বলেছেন, তাঁর মন্তব্য প্রসঙ্গ থেকে আলাদাভাবে দেখা হয়েছিল। কোনও কিছুর পূর্বাভাস তিনি করেননি। নিজেদেরকে এতটা ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানো সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছিলেন মাত্র। রাজন বলেছিলেন, গত বছরের এপ্রিলে ওই মন্তব্য করেছিলেন তিনি। তারপর থেকে প্রতি ত্রৈমাসিকেই বৃদ্ধির হার পড়েছে।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুনে জিডিপির হার বিগত ত্রৈমাসিকের ৬.১ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ৫.৭ শতাংশ। অন্যদিকে, ওই দুটি ত্রৈমাসিকেই চিনের বৃদ্ধির হার ছিল ৬.৫ শতাংশ।

রাজন বলেছেন, বেসরকারি লগ্নি ও রফতানির পরিমাণ বাড়িয়ে বৃদ্ধির হার ৮ বা ৯ শতাংশে নিয়ে যেতে হবে। আগামী ১০ বছরে বৃদ্ধির হার ৮-১০ শতাংশ হলে তা হবে দারুন ব্যাপার। কিন্তু একইসঙ্গে বলেছেন, এই পরিমাণ বৃদ্ধি ১০ বছর বজায় রাখা সম্ভব হলে তাতেও মধ্যআয়ের পর্যায়ে পৌঁছবে ভারত।

রাজন ২০০৮-এর আন্তর্জাতিক আর্থিক সঙ্কটের পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, ভারতের অর্থনীতির পরিমাণ খুবই কম, মাত্র আড়াই মিলিয়ন ডলারের। তাও আমরা নিজেদের বড় দেশ বলে মনে করি।

চিনের অর্থনীতি ভারতের তুলনায় পাঁচগুণ বেশি। রাজন বলেছেন, এক্ষেত্রে ভারত ও চিনের তুলনাটা সঙ্গত নয়। একদিকে চিনের অর্থনীতির বৃদ্ধির হার  কমতে থাকবে, আর আগামী ১০ বছরে ভারতে দ্রুত বৃদ্ধি হলে সেই তুলনা করা যায়। আর তখনই ভারতকে সবাই সমীহের চোখে দেখবে।