লখনউ: বিয়ের আয়োজন হয়েছিল। কিন্তু পুলিশি বাধায় স্থগিত হয়ে গেল ভিন ধর্মে বিয়ে। উত্তরপ্রদেশের লখনউতে পারা থানা এলাকার দুদা কলোনিতে দুই বাড়ির সম্মতিতে ওই বিয়ের আয়োজন করা হয়েছিল। ধর্মান্তরণের কোনও ব্যাপার নেই বলেও জানিয়েছে বরপক্ষ। কিন্তু পুলিশের বক্তব্য, উত্তরপ্রদেশের নতুন আইন অনুযায়ী তাদের অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন। সেই আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তবেই তারা বিয়ে করতে পারবেন।
পাত্র পেশায় ফার্মাসিস্ট। বয়স ২৪ বছর। কনের বয়স ২২ বছর। তাঁরা প্রতিবেশীও বটে। কয়েক বছরের সম্পর্ক এদিন পরিণতি পাওয়ার কথা ছিল বিবাহে। এমনকি দুই ধর্মে রীতিনীতি মেনে বিয়ের অনুষ্ঠান করার কথাও ছিল দুই পরিবারের। পাত্রের কথায়, ’’ ধর্মান্তরণের কোনও প্রশ্নই নেই। ধর্মান্তরণ নিয়ে আমরা কোনও আলোচনা পর্যন্ত করিনি। আমি মনে করি ভালোবাসা যথেষ্ট। একসঙ্গে চলার পথে আমি যদি ওর ধর্ম এবং ওকে মেনে নিতে পারি, এবং ও যদি তাই পারে, তাহলে আমরা সুখে থাকতে পারব।‘‘
ভিন ধর্মে বিয়েতে আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন পাত্রীর মা। তাঁর কথায় ’’ আমার মেয়ে কাকে বিয়ে করল, তা কারও দেখার বিষয় নয়। আমরা যে কলোনিতে থাকি, সেখানে হিন্দু-মুসলিম মিলেমিশে থাকি।আমাদের বহু মুসলিম বন্ধুও রয়েছেন। তাহলে আমার মেয়ে কেন একজন মুসলিমকে বিয়ে করতে পারবেন না? তা ছাড়া বরের বাড়ি থেকে কেউ ধর্মান্তরণের কথা বলেননি। আমি জানি না কারা পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন।‘‘
একই কথা বলেছেন কনে। তিনি জানিয়েছেন ভিনধর্মের হলেও, তাঁদের ভালোবাসাকে পরিণতি দিতেই বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। নতুন আইন অনুযায়ী অনুমতি নেওয়ার কথা তারা জানতেন না। জানা না থাকলে অকারণ তাঁদের এই হেনস্থার মধ্যে পড়তে হতো না বলেও জানিয়েছেন পাত্রী।
’লাভ জিহাদ‘ রুখতে উত্তরপ্রদেশে সদ্য নতুন অধ্যাদেশ জারি হয়েছে। ধর্মান্তরণ বিরোধী ২০২০ অধ্যাদেশ অনুযায়ী, ধর্মান্তরণ করতে চাইলে কমপক্ষে ২ মাস আগে জেলাশাসকের কাছে অনুমতি নিতে্ হবে। তবে আইনজীবী মুক্তেশ্বর মিশ্র জানিয়েছেন যেহেতু তাঁরা ধর্মান্তরণ করছেন না তাই তাঁদের ক্ষেত্রে এই নয়া আইন প্রযোজ্য নয়। তাঁরা স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট অনুযায়ী বিয়ে করছিলেন।
পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে হিন্দু সংগঠন রাষ্ট্রীয় যুব বাহিনীর তরফে অভিযোগ পেয়ে বুধবার রাতে বিয়ে বাড়িতে হাজির হয়েছিলেন তারা। তবে কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।
এভাবে বিয়ে স্থগিত হয়ে যাওয়ার মানসিক ভাবে খানিকটা বিপর্যস্ত কনে ও বর পক্ষ। তবে কনের পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে তাঁরা কোনও ধরনের গণ্ডগোল চান না। প্রয়োজনীয় অনুমতি পেলেই তবেই ফের এগোবেন।