নয়াদিল্লি: ১২ বছরের নীচে শিশু-ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ডের সংস্থান থাকা গুরুত্বপূর্ণ বিল পাস হল লোকসভায়। আইন কঠোর হওয়ার ফলে, শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনের মাত্রা কমবে বলে মনে করা হচ্ছে।


জম্মু ও কাশ্মীরের কাঠুয়া ও উত্তরপ্রদেশের উন্নাওকাণ্ডের পর, দেশজুড়ে বাড়তে থাকা ধর্ষণের বিরুদ্ধে তুমুল শোরগোল উঠেছিল। বিশেষ করে, কাঠুয়াকাণ্ডের জেরে গত ২১ এপ্রিল, শিশু ধর্ষকদের বিরুদ্ধে কঠর সাজার সংস্থান তৈরি করতে তড়িঘড়ি অপরাধমূলক আইন (সংশোধনী) অর্ডিন্যান্স জারি করেছিল কেন্দ্র। এদিন এই বিল পাস হওয়ায় তা ওই অর্ডিন্যান্সের বদলে কার্যকর হল।


এদিন বিল পেশ করা হলে, তাকে সমর্থন করে প্রায় সবকটি রাজনৈতিক দল। যদিও, অর্ডিন্যান্স রুটের মাধ্যমে বিল পাস করানোর জন্য বিরোধীদের কয়েকজন সদস্য কেন্দ্রের সমালোচনা করে। কিন্তু, ধ্বনিভোটের মাধ্যমে সহজেই নিম্নকক্ষে পাস হয়ে যায় বিলটি। বিরোধীদের কয়েকজন এই বিলে আরও সংশোধনী আনার প্রস্তাব দিলে, তা ধ্বনিভোটের মাধ্যমে খারিজ হয়ে যায়।


এদিন ভোটাভুটির আগে বিল নিয়ে প্রায় দুঘণ্টা ধরে বিতর্ক-আলোচনা হয় লোকসভায়। সেখানে সরকারপক্ষের বক্তব্য রাখতে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু বলেন, শিশুকন্যা ও বালিকাদের সুরক্ষার্থে একটা কঠোর আইনের প্রয়োজন। তাঁর দাবি, ভারতীয় দণ্ডবিধিতে মহিলা-ধর্ষণের বিরুদ্ধে কড়া শাস্তির সংস্থান থাকলেও, ১২-১৬ বছরের কম বয়সীদের ধর্ষণ ও গণধর্ষণে দোষীদের কঠোর সাজার সংস্থান নেই।


রিজিজু জানান, সাম্প্রতিককালে শিশুদের ওপর হওয়া নারকীয় অত্যাচারের ঘটনাসমূহ দেশের ভাবাবেগে চরম আঘাত করেছে। যার জেরে, ১২-১৬ বয়সীদের ওপর ধর্ষণে দোষীদের চরম শাস্তি দেওয়াটা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। এই সময় ডেপুটি স্পিকার থাম্বি দুরাই প্রস্তাব দেন, দেশব্যাপী নতুন আইনের সর্বাত্মক প্রচার হওয়া প্রয়োজন, যাতে সকলে এধরনের ঘৃন্য কাজ করার আগে ভাবে এবং একইসঙ্গে, সাধারণ মানুষও আইন সম্পর্কে অবগত হোন।


রিজিজু জানান, বিলে ১২ বছরের নীচে বালিকা ধর্ষকদের ন্যূনতম সাজা ২০ বছর। সর্বাধিক আজীবন কারাবাস অথবা মৃত্যুদণ্ড। গণধর্ষণের ক্ষেত্রে ন্যূনতম সাজা আজীবন কারাবাস। সর্বাধিক মৃত্যুদণ্ড। ১২-১৬ বছরের মধ্যে কিশোরীদের ধর্ষণকারীদের ন্যূনতম সাজা ২০ বছর করা হয়েছে। সর্বাধিক আজীবন কারাবাস। পাশাপাশি, মহিলাদের ক্ষেত্রেও ন্যূনতম সাজা সাত বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করা হয়েছে। সর্বাধিক যাবজ্জীবন।


সাজার সংস্থান ছাড়াও, বিলে দ্রুত তদন্ত এবং মামলার নিষ্পত্তির কথাও বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, সব ধরনের ধর্ষণের মামলায় তদন্ত ২ মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে। মামলাও শেষ করতে হবে আরও ২ মাসের মধ্যে। আপিলের জন্য ৬ মাসের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। বিলে বলা হয়েছে, ১৬ বছরের নীচে কিশোরীদের ধর্ষণে অভিযুক্তদের কোনও অবস্থাতেই অগ্রিম জামিন প্রদান করা হবে না।


বিলে আরও বলা হয়েছে, ১৬ বছরের নীচে হওয়া ধর্ষণের মামলায় জামিনের আবেদন সংক্রান্ত রায় দেওয়ার আগে সরকারি কৌঁসুলি ও অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবীকে ১৫ দিনের নোটিস দিতে হবে আদালতকে।