সিরসা (হরিয়ানা): সিরসার ডেরা সচ্চা সৌদার সদর দফতরে ‘স্যানিটাইজেশন’ অভিযানে উদ্ধার হল একটি রেজিস্ট্রেশন নম্বর বিহীন বিলাসবহুল গাড়ি। উদ্ধার হল বেশ কিছু পুরনো বাতিল নোটও।


হরিয়ানার সিরসায় ৮০০ একর জমিতে বিস্তৃত ডেরা সচ্চা সৌদার সদরে যৌথ সমন্বয়ে জোর তল্লাশি-অভিযান চালাল নিরাপত্তা বাহিনী ও বিভিন্ন সরকারি দফতরের কর্মীরা। হরিয়ানার তথ্য ও উপ-মুখ্য জনসংযোগ অধিকর্তা সতীশ মেহরা জানান, কয়েকটি ঘরকে সিলড করা হয়েছে।


তিনি বলেন, বেশ কিছু কম্পিউটার হার্ড ডিস্ক ও বেনামী ওষুধ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। একটি অনথিভুক্ত হওয়া লেক্সাস গাড়ি, একটি ওবি ভ্যান, ৭ হাজার টাকা মূল্যের বাতিল নোট, ১২ হাজার নগদ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তিনি যোগ করেন, করনাল ও সোনিপতের ফরেন্সিক দল এবং রুরকি থেকে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের আনা হয়।


মঙ্গলবারই, অবসরপ্রাপ্ত দায়রা বিচারক এ কে এস পওয়ারকে এই অভিযানের জন্য কোর্ট কমিশনার হিসেবে নিয়োগ করে পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট। কীভাবে অভিযান চালানো হবে সেই সংক্রান্ত খুঁটিনাটি ঠিক করতে গতকাল বৈঠক করেন কোর্ট কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত বিচারক এ কে এস পাওয়ার।


এদিন সকাল ৮টা নাগাদ তাঁর নেতৃত্ব ও নজরদারিতেই ‘স্যানিটাইজেশন’ অভিযান চলে। জানা গিয়েছে, পুরো ডেরা সদর দফতরকে ১০ ভাগে ভাগ করে চলেছে তল্লাশি। ১০টি টিম হাত দেয় এই কাজে। প্রচুর গাড়ি ও বাসে করে ডেরায় প্রবেশ করে অভিযান টিম। সেই দলে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী ছাড়াও ছিলেন রাজ্যের বিভিন্ন জেলাশাসক, উপ-জেলাশাসক ও রাজস্ব দফতরের আধিকারিকরা।


ডেরা প্রধান রাম রহিমের রায়দানের দিন যে পরিমাণ হিংসা হয়েছিল, তাকে মাথায় রেখে এদিন বহুস্তরীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। তার মধ্যে ছিল-- বোমা নিষ্ক্রিয়করণ স্কোয়াড, ছিল কুইক রিয়্যাকশন টিম, অ্যান্টি-সাবোতাজ টিম।


ছিল ডগ স্কোয়াড ও সোয়াট টিম। ছিল ফায়ার ব্রিগেড ও অ্যাম্বুলেন্স। আনা হয়েছিল আনা হয়েছিল ট্র্যাক্টর ও আর্থ-মুভার। রাজ্য প্রশাসনের নির্দেশে তল্লাশির ছবি তুলেছে ৬০টি ক্যামেরা। গোটা প্রক্রিয়ার ভিডিওগ্রাফিও চলে।


অভিযানের আগে গোটা এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। ডেরার সামনে মোট ১৬টি নাকা বা চেকপয়েন্ট গড়ে তোলা হয়। এলাকার নিরাপত্তার জন্য মোতায়েন ছিল সেনা, ৪১ কোম্পানি আধা সামরিক বাহিনী। কেন্দ্রীয় বাহিনীর মধ্যে ছিল সিআরপিএফ, এসএসবি, র‌্যাফ এবং বিএসএফ।


গোটা জেলায় আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার লক্ষ্যে মোতায়েন হয়েছেন ৫,০০০ নিরাপত্তাকর্মী। ডেরা হেডকোয়ার্টারের বাইরে মোতায়েন করা হয় ৯টি ডগ স্কোয়াডকেও। জানা গিয়েছে, যতক্ষণ এই অভিযান চলেছে, ততক্ষণ গোটা সিরসায় বজায় ছিল কারফিউ। গোটা সিরসায় বন্ধ ছিল ইন্টারনেট পরিষেবা। এমনকী, সংবাদমাধ্যমকেও সাত কিলোমিটার দূরে আটকে দেওয়া হয়। কোনও অযাচিত লোককে ডেরার ত্রিসীমানায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।


শেষ কয়েক দিনে ওই এলাকা থেকে ২২০টি এলপিজি সিলিন্ডার উদ্ধার করেছে পুলিশ। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ২০টি কমার্শিয়াল সিলিন্ডার। পুলিশ জানিয়েছে, সিরসায় ৯,০০০-এর বেশি লাইসেন্স থাকা অস্ত্রশস্ত্র রয়েছে। সেগুলির মধ্যে ৮,২০০টি অস্ত্র ইতিমধ্যেই বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ডেরা সমর্থকদের নামে রেজিস্টার করা অস্ত্রও সমর্পণ করানো হয়।


হরিয়ানা ডিজিপি বি এস সান্ধু জানান, অভিযানে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে ডেরা ম্যানেজমেন্ট। ডেরা চেয়ারপার্সন বিপাসান্না ইনসান বলেন, আমরা সর্বদা আইনকে অনুসরণ করেছি। এই অভিযানে আমরা পূর্ণ সহযোগিতা করব। আমরা সকলকে শান্তি বজায় রাখার অনুরোধ করছি।


ডেরার মধ্যে রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাজার, হাসপাতাল, স্টেডিয়াম, বিনোদনের জায়গা এবং প্রচুর বাড়ি। গত মাসের শেষে জোড়া ধর্ষণের অপরাধে গ্রেফতার হন ডেরা সর্বাধিনায়ক গুরমীত রাম রহিম সিংহ ইনসান। এর জেরে হরিয়ানার সিরসা ও পাঁচকুলায় তাণ্ডব চালায় ডেরা সমর্থকরা। ৩৫ জন মারা যায়। আহত পাঁচ শতাধিক।