মুম্বই: একদিকে মুখ্যমন্ত্রীর কড়া মনোভাব। অন্যদিকে, হাইকোর্টের তীব্র ভর্ৎসনা। এই জোড়া আক্রমণের মুখে অবশেষে পিছু হঠে গত ৫ দিন ধরে চলা ধর্মঘট প্রত্যাহার করলেন মহারাষ্ট্রের জুনিয়র চিকিৎসকরা।


শুক্রবার ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)-র মহারাষ্ট্র চেম্বার্সের তরফে ঘোষণা করা হয়, রেসিডেন্ট চিকিৎসকদের ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হল। মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফঢ়ণবীশের সঙ্গে বৈঠক করেন আইএমএ প্রতিনিধিরা।


সেখানে মুখ্যমন্ত্রী তাদের আশ্বাস দেন, ১৬টি হাসপাতালে ইতিমধ্যেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আগামী ১০ দিনে আরও পদক্ষেপ নেওয়া হবে। রাজ্য প্রশাসনের থেকে এই আশ্বাস পাওয়ার পরই ধর্মঘট প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।


এর আগে, হাসপাতালের রেসিডেন্ট ডাক্তারদের লাগাতার কর্মবিরতির অবসান ঘটাতে ময়দানে অবতীর্ণ হন খোদ মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফঢ়ণবীশ।


ধর্মঘটী চিকিৎসকদের মনোভাবকে অনড় ও অসংবেদনশীল উল্লেখ করে তিনি হুঁশিয়ারি দেন, অবিলম্বে কাজে যোগ না দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।


চিকিৎসক কর্মবিরতির জেরে কার্যত অচল হয়ে পড়া রাজ্যের স্বাস্থ্য-ব্যবস্থার সমাধানসূত্র বের করতে এদিন বিধানসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে ফঢ়ণবীশ বলেন, অনেক হয়েছে। চিকিৎসকরা যদি আজ কাজে যোগ না দেন, তাহলে সরকার চুপ করে বসে থাকবে না।


সমাধানসূত্র বের করতে এদিন ধর্মঘটী চিকিৎসকদের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানিয়ে দেন, সেখানে যদি সমাধান না বের হয় এবং চিকিৎসকরা যদি কাজে যোগ না দেন, তাহলে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে সরকার।


মুখ্যমন্ত্রী ফঢ়ণবীশ জানান, রোগীদের চিকিৎসা না করে তাঁদের মৃত্যুপথে ছেড়ে দিয়ে ডাক্তাররা কী করে এতটা অসংবেদনশীল মনোভাবের পরিচয় দিচ্ছে, তা তাঁর বোধগম্য হচ্ছে না বলে এদিন বিধানসভায় জানান ফঢ়ণবীশ।


ফঢ়ণবীশ জানান, চিকিৎসকদের সব দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। যেমন—হাসপাতালের নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ, ওপিডি, ক্যাজুয়াল্টি-তে আসা-যাওয়ার ওপর নজরদারি, সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন।


পাশাপাশি, সরকারি কর্মীর মতো আক্রান্ত চিকিৎসকদের আইনি ও মেডিক্যাল খরচ বহন করারও আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন। তাঁর মতে, এত আশ্বাস দেওয়া সত্ত্বেও চিকিৎসকরা কর্মবিরতি শেষ করছে না, এটা বিস্ময়ের।


ফঢ়ণবীশ বলেন, রোগীদের সেবা করার শপথ নিয়ে চিকিৎসকরা এভাবে দিনের পর দিন যদি ধর্মঘট চালাতে থাকেন, তাহলে তাঁদের সঙ্গে চিকিৎসককে পেটানোর মতো অসামাজিক মনোভাব পোষণ করা ব্যক্তিদের পার্থক্য কোথায় খাকল!


তিনি যোগ করেন, চিকিৎসকরা হাইকোর্টের নির্দেশও মানছে না, এটা চলতে পারে না। তাঁর কটাক্ষ, মানুষ চিকিৎসকদের ভগবানের চোখে দেখেন। তাঁরা (চিকিৎসকরা) যেন এসব করে মানুষের চোখে শয়তান না হয়ে যান!


ধর্মধটী রেসিডেন্ট চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মহারাষ্ট্রের শিক্ষামন্ত্রী গিরিশ মহাজনও। তিনি জানান, কর্মবিরতি না শেষ করলে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


শুধু মহারাষ্ট্র প্রশাসন নয়। এদিন ফের একবার ধর্মঘটী চিকিৎসকদের তীব্র ভর্ৎসনা করে বম্বে হাইকোর্ট। এদিন প্রধান বিচারপতি মঞ্জুল্লা চেল্লুর ও বিচারপতি জি এস কুলকার্নির ডিভিশন বেঞ্চ চিকিৎসকদের ধর্মঘট প্রসঙ্গে জানায়, এরকম চললে জনতার রোষের মুখে পড়তে হবে চিকিৎসকদের।


আদালতের মতে, চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ধর্মঘটী চিকিৎসকদের বরখাস্তও করতে পারে বলেও জানায় বেঞ্চ। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই ধর্মঘট প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেয় চিকিৎসক-সংগঠন।


প্রসঙ্গত,  সরকারি হাসপাতালে রোগীর পরিজনদের হাতে নিগ্রহ হওয়ার প্রতিবাদে গত সোমবার থেকে লাগাতার কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে মহারাষ্ট্রের চিকিৎসক সংগঠন। তাতে যোগ দেয় প্রায় চার হাজার জুনিয়র চিকিৎসক।