নয়াদিল্লি: গতকাল দিল্লি রওনা হওয়ার আগে তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, নোট বাতিল ইস্যুতে দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠবে। এদিন যন্তরমন্তরে এই ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে তীব্র আক্রমণ শানালেন মমতা। সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীকে চরমসীমাও দিয়েছিলেন। কিন্তু এরপরও নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত থেকে এক পা পিছু হঠেনি মোদী সরকার। এর পরিপ্রেক্ষিতে এদিন যন্তরমন্তরে ধর্ণায় বসেন মমতা। জেডি-ইউ, সমাজবাদী পার্টি ও এনসিপির প্রতিনিধিদের পাশে নিয়ে তৃণমূলের ধর্ণা মঞ্চ থেকে মমতা বলেছেন, মোদীর হাতে দেশ আদৌ সুরক্ষিত নয়। তিনি বলেন, নোট বাতিলের ফলে সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগের মুখে পড়েছেন। তাঁর অভিযোগ, কেন্দ্র এভাবে কৃষক, যুবক, মহিলা,শ্রমিক ও ব্যবসায়ী সহ সমাজের সর্বস্তরের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে। নোট বাতিলের ফলে দেশের আর্থিক বৃদ্ধিও থমকে গিয়েছে। তিনি বলেন, দেশের মানুষকে লুঠ করছে সরকার। বললেন, অচ্ছে দিনের কথা বলে ক্ষমতায় এসে নোট লুঠ করা হচ্ছে। সুইস ব্যাঙ্কে গচ্ছিত কালো টাকা উদ্ধারের কোনও চেষ্টা করা হচ্ছে না কেন, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তৃণমূল নেত্রী। কালো টাকা বাতিলকে কালো আইন বলেও কটাক্ষ করেন তিনি। তাঁর হুঁশিয়ারি, আগামী বিধানসভা ভোটগুলিতে বিজেপিকে এর উচিত শিক্ষা মানুষ দেবেন। মমতা বলেন, ‘আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, কেউ বিজেপিকে ভোট দেবে না। আমি প্রধানমন্ত্রী হলে জনগনের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতাম। আপনার এত অহঙ্কার কিসের?’


উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগে মোদী নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করায় মমতার নাম না করে সারদা কেলেঙ্কারির প্রসঙ্গ তুলে খোঁচা দিয়েছিলেন।

এদিন কার্যত মোদীর কটাক্ষের জবাব দিতে গিয়ে মমতা বলেছেন, ‘দেশের প্রত্যেককে কালোবাজারি বলছেন, আর আপনি নিজেকে সাধু বলে চালাতে চাইছেন’।

তৃণমূলের প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে জেডি-ইউ নেতা শরদ যাদব নোট বাতিলের আইনগ্রাহ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এই সিদ্ধান্তে কীভাবে দেশের ভালো হবে, তা সংসদের কাছে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন তিনি।

সমাজবাদী পার্টির ধর্মেন্দ্র যাদব, আম আদমি পার্টির রাঘব চাধা এবং এনসিপি-র মজিদ মেমনও ভাষণ দেন।

এদিন সভামঞ্চের বাইরে একদল লোক ‘মোদী, মোদী’ স্লোগান দিচ্ছিলেন। এতেও প্রচুর চটে যান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, তাঁদের মিটিং ভেস্তে দিতে ওই লোকজনদের পাঠানো হয়েছে। পুলিশ ও প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ ব্যক্ত করেন মমতা।

গতকালের উপনির্বাচনের ফলাফল উল্লেখ করে মমতা বলেন, মধ্যপ্রদেশের বিজেপির ভোট কমেছে। মোদী দেশের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন মমতা।

মমতা বলেন, নোট বাতিলের ফলে মানুষ যে সমস্যায় পড়েছে, তার সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তিনি আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

টাকা বাতিলের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলি আগামী ২৮ নভেম্বর দেশজুড়ে যে প্রতিবাদ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে, তাকে সমর্থন করেছেন তৃণমূল নেত্রী।

উল্লেখ্য, এই ইস্যুতে গত সপ্তাহেও দিল্লিতে আপ নেতা তথা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালের সঙ্গে প্রতিবাদ কর্মসূচীতে সামিল হয়েছিলেন মমতা।