মেওয়াট ও নয়াদিল্লি: 'ইনসাফ' চাইছেন পেহলু খানের পরিবার। ৫৫ বছরের পেহলু খান মেওয়াটের লুহ তহশিলের জয়সিংপুর গ্রাম থেকে ২৪০ কিলোমিটার দূরে রাজস্থানে জয়পুরে গত শুক্রবার দুগ্ধবতী মহিষ কিনতে গিয়েছিলেন। পেশায় দুধের ব্যবসায়ী পেহলু রমজানের আগে দুধের উত্পাদন বাড়াতে গরু কেনার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু গত শনিবার কিনে বসলেন দুগ্ধবতী গরু। কারণ, বিক্রেতা তাঁর চোখের সামনেই হাতেকলমে দেখান যে, ওই গরু ১২ লিটার দুধ দেয়। তাছাড়া দামটাও ছিল ধরাছোঁয়ার মধ্যে। কিন্তু এভাবে মহিষের বদলে গরু কেনার মূল্য পেহলু খানকে চোকাতে হল প্রাণের বিনিময়ে। গরু কিনে ফেরার পথে আলওয়ারে বেহরোর এলাকায় জাতীয় সড়কে শনিবার সন্ধেয় গোরক্ষকদের নৃশংস হামলার মুখে পড়তে হয় বলে অভিযোগ। ঘটনার সময় সঙ্গে ছিলেন পেহলুর ২৪ বছরের ছেলে ইরশাদ ও তাঁর ভাই আরিফ। ইরশাদ এখন গরু কেনার সিদ্ধান্তের জন্য আফসোস করছেন বলে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানানো হয়েছে।
আরিফ জানিয়েছেন, দুটি ট্রাকে করে কয়েকটি গরু ও বাছুর নিয়ে আসছিলেন তাঁরা। তাঁর অভিযোগ, মাঝপথে গাড়ি থামিয়ে চড়াও হয় গোরক্ষকরা। গাড়ি থেকে টেনে নামিয়ে তাঁদের বেধড়ক মারধর করা হয়। ২০-৩০ মিনিট পরে পুলিশ আসে।ততক্ষণে তাঁরা অচেতন হয়ে পড়েন।
গোরক্ষকদের অভিযোগ ছিল, পেহলু খানদের ট্রাকে বেআইনিভাবে গরু পাচার করা হচ্ছিল। রাজস্থান পুলিশও আরিফদের বিরুদ্ধে হত্যার জন্য গরু পাচারের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে। দামোদর সিংহ নামে এই ব্যক্তির অভিযোগের ভিত্তিতে এই মামলা রুজু করেছে পুলিশ। এফআইআরে বলা হয়েছে, পেহলু খান ও তাঁর সঙ্গীদের কাছে গরু ক্রয়ের কোনও কাগজপত্র বা রসিদ ছিল না। কিন্তু ইরশাদ দাবি করেছেন, তাঁদের কাছে রসিদ ছিল। সেই রসিদে জয়পুর পুরসভার স্ট্যাম্পও ছিল। ৪৫ হাজার টাকায় ওই গরু ও বাছুরগুলি তাঁরা কিনেছিলেন। তাঁদের কাছে থাকা টাকা ও মোবাইল ফোনও লুঠ হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ ইরশাদের। তাঁরা এখন সুবিচার চাইছেন।
জয়সিংপুর গ্রামের বাসিন্দাদের বেশিরভাগই কৃষক। তাঁদের মধ্যে ১০ জন দুগ্ধ ব্যবসায়ী। গ্রামের সবচেয়ে বড় দুগ্ধ ব্যবসায়ী জাকির খানও পেহলু খানদের সঙ্গেই জয়পুরে গিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, সেখানে অনেকটাই কম দামে গরু-মহিষ পাওয়া যায়। অতীতেও তিনি জয়পুর থেকে গরু ও মহিষ কিনেছেন বলে তথ্য-প্রমাণ দেখিয়ে দাবি করেছেন জাকির।
পেহলুদের ওপর আক্রমণের কিছুক্ষণ করে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিলেন জাকির। ঘটনার কথা জেনে তিনি পালিয়ে যান।
পেহলু খানকে পিটিয়ে মারার ঘটনায় ২০০ লোকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হলেও এখনও পর্যন্ত মাত্র ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।