নয়াদিল্লি: ফসল নষ্টের জের! বিহারের মোকামায় নীলগাই নিধনের ঘটনা ঘিরে তুঙ্গে বিতর্ক। হায়দরাবাদ থেকে পেশাদার শ্যুটার এনে গত ৪ দিনে গুলি করে মারার অভিযোগ উঠেছে বিপন্ন প্রজাতির প্রায় ২৫০ নীলগাইকে।
একেবারে দুষ্কৃতী বা জঙ্গি নিধনের স্টাইলে গত চারদিন ধরে বিহারে চলছে বিপন্ন প্রজাতির নীলগাই নিধনের কাজ। কারণ, এই নীলগাইদের তাণ্ডবেই নাকি ব্যতিব্যস্ত বিহারের মোকামার কৃষকরা। তাঁদের দাবি, জমির পর জমির ফসল নষ্ট করে দিচ্ছে নীলগাইয়ের দল। অগত্যা বিহার সরকারের দ্বারস্থ হন কৃষকরা। নীলগাই নিকেশের জন্য কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকের অনুমতি চায় নীতীশ কুমার সরকার। অনুমতি মিলতেই মোকামায় শুরু হয় নীলগাই নিধন।
হায়দরাবাদ থেকে ভাড়া করে আনা হয় পেশাদার শ্যুটার। গত ৪ দিন ধরে চলছে নীলগাই নিধন। এখনও পর্যন্ত প্রায় আড়াইশো নীলগাইকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছে। কৃষকদের দাবি, গত কয়েকবছরে নীলগাইদের তাণ্ডবে তাঁদের লক্ষাধিক টাকার ফসল নষ্ট হয়ে গিয়েছে।




এভাবে নীলগাই নিধন ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক। বাক-তরজায় মোদী সরকারের দুই মন্ত্রী। নীলগাই নিধন নিয়ে কেন্দ্রীয় পরিবেশমন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন কেন্দ্রের আরেক মন্ত্রী তথা পশুপ্রেমী মেনকা গাঁধী।
মেনকা গাঁধীর অভিযোগ, পরিবেশ মন্ত্রক রাজ্যগুলিকে অবাধ পশু হত্যার অনুমতি দিয়েছে। সেজন্যই বাংলা হাতিদের মারা হচ্ছে, হিমাচলা মারা হচ্ছে বাঁদর, আর বিহারে নীলগাই। উল্লেখ্য, মানেকা পশুপ্রেমী হিসেবেই পরিচিত। সঞ্জয় গাঁধী অ্যানিমেল কেয়ার সেন্টারের প্রধান তিনি।
মন্ত্রিসভায় সতীর্থ মেনেকা গাঁধীর আক্রমণ নিয়ে কোনও মন্তব্য না করলেও, কেন্দ্রীয় পরিবেশমন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরের দাবি, আইন মেনে, বিহারের কৃষকদের স্বার্থরক্ষায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিহার সরকারের আবেদনের প্রেক্ষিতেই অনুমতি দিয়েছে কেন্দ্র।
কলকাতায় এসে মোদী সরকারের কৃষি প্রতিমন্ত্রী সঞ্জীব বালিয়ানেরও দাবি, কোনও পশু ফসল নষ্ট করলে, তাকে নিয়ন্ত্রণ করা বা প্রয়োজনে মেরে ফেলারও আইনি সংস্থান রয়েছে। তাই বিহারে যা হয়েছে, সবটাই হয়েছে আইন মেনে।



আইন থাকলেও, এভাবে পশু হত্যা আদৌ যুক্তি সঙ্গত কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে বিভিন্ন পশুপ্রেমী সংগঠন। তাদের বক্তব্য, মানুষের জন্যই তো আজ জঙ্গল বিপন্ন। সেজন্যই খাবারের সন্ধানে জঙ্গল ছেড়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে নীলগাইরা। এতে পশুদের দোষ কোথায়? গুলি করে হত্যা না করে কি, অন্য কোনও রাস্তা ছিল না? প্রশ্ন পশুপ্রেমী সংগঠনগুলির।
প্রসঙ্গত, বিহারে এই মুহূর্তে প্রায় ২৫ হাজার নীলগাই রয়েছে। যার মধ্যে ১০ হাজার রয়েছে মোকামায়। ২০১৩ সালে সংরক্ষিত প্রাণীদের তালিকা থেকে নীলগাইকে বাদ দিয়ে দেয় বিহার সরকার।
এরপর দ্রুত নীলগাইয়ের সংখ্যা বাড়তে থাকায় এবং তাদের তাণ্ডবে ফসল নষ্টের জেরে, নীলগাই মারার জন্য কেন্দ্রের অনুমতি চায় নীতীশ সরকার। এরপর মোদী সরকারের পরিবেশমন্ত্রক, ফসল নষ্টকারী পশুদের তালিকায় জুড়ে দেয় নীলগাইয়ের নাম। সেই সঙ্গে বিহার সরকারকে নীলগাই হত্যারও অনুমতি দিয়ে দেয়।