নয়াদিল্লি:  ২৬/১১-র ন বছর পূর্তিতে ৩৮ তম মন কি বাতের আসরে সেদিনের হামলায় যাঁরা প্রাণ হারিয়েছিলেন, তাঁদের সকলকে সেলাম জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রী আজকের মন কি বাতের আসরে মন্তব্য করেন, বর্তমানে গোটা মানব সভ্যতার কাছে সবচেয়ে বড় আতঙ্কের নাম সন্ত্রাসবাদ। সারা বিশ্বের উচিত একজোট হয়ে সন্ত্রাসবাদকে নির্মূল করা।


মোদী আজ তাঁর রেডিও অনুষ্ঠানের শুরুতেই বলেন, সেদিনের নৃশংস হামলায় প্রাণ গিয়েছিল একাধিক নিরীহ পুরুষ-নারীর এবং অবলা শিশুর। বদলে গিয়েছিল অসংখ্য মানুষের জীবন। সেদিনের সেই হামলার ঘা আজও দগদগে গোটা দেশবাসীর হৃদয়ে। বিগত চার দশক ধরে আন্তর্জাতিক মঞ্চে সন্ত্রাসবাদ ইস্যুকে তুলে ধরার চেষ্টা করছে ভারত। প্রথমে এই বিষয়ে ভারতের বক্তব্যকে কেউ তেমন গুরুত্ব না দিলেও, বর্তমানে গোটা বিশ্ব বুঝতে পেরেছে এর ভয়াবহতা।

তবে ২৬/১১ ভারতের ইতিহাসে শুধু মুম্বই হামলার বর্ষপূর্তি হিসেবেই মনে থাকবে না, ১৯৪৯ সালে এই দিনেই খসড়া তৈরি করা হয়েছিল ভারতীয় সংবিধানের। আজকের দিনটি ইতিহাসের পাতায় সংবিধান দিবস হিসেবেও উল্লেখিত আছে। সেইজন্যে আজকের এই ঐতিহাসিক দিনটিকে স্মরণ করে মোদীর মন্তব্য, আমাদের সংবিধান দুঃস্থ ও দুর্বলদের অধিকার রক্ষার জন্যে অঙ্গীকারবদ্ধ। বর্তমান সরকার, সেই অঙ্গীকার রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ মন্তব্য প্রধানমন্ত্রীর।

আজকের আসর থেকে নৌ বাহিনীকেও তাঁদের কাজের জন্যে কুর্ণিশ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আগামী ৪ ডিসেম্বর নৌ দিবস। সেই উপলক্ষেই তাদের আগাম শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর। ভারতের নিরাপত্তায় নৌ বাহিনীর ভূমিকার কথা উল্লেখ করে মোদী মন্তব্য করেন, ভারতের গর্ব, ভরসা ভারতীয় সেনা বাহিনী। তাঁদের আত্মবলিদান ছাড়া দেশের ১২৫ কোটি মানুষ কোনও ভাবেই শান্তিতে জীবনযাপন করতে পারতেন না, দাবি প্রধানমন্ত্রীর।

ভারতীয় নৌ বাহিনীর কথা বলতে গিয়ে, অতীতে চোলা সাম্রাজ্য, শিবাজীর সময়ের কথাও উল্লেখ করেন তিনি। সেই সময় থেকে নিজেদের দায়িত্ব দৃঢ়তা, এবং সততার সঙ্গে পালন করছে নৌ-সেনা। বর্তমান সময়েও তাঁদের বিভিন্ন কার্যকলাপের কথা উল্লেখ করে নৌ বাহিনীর ভূয়সী প্রশংসা করেন মোদী।

মোদীর আজকের মন কি বাতের আসর ছিল চায়ের সঙ্গে। প্রসঙ্গত, আজকের আসরে সাধারণ মানুষ চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে মোদীর দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বার্তার কথা শুনেছেন।

একনজরে দেখে বেন মোদীর আজকের বক্তব্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি

  • ভারতের সংবিধান যাঁরা তৈরি করেছিলেন, তাঁদের ধন্যবাদ জানিয়ে মোদী বলেন, তাঁরা দেশবাসীকে সুন্দর একটি সংবিধান উপহার দিয়েছেন, যারজন্যে গোটা দেশ আজ গর্বিত।


 

  • আমাদের দেশের সংবিধান দুঃস্থ, গরিব এবং সমাজের দুর্বল মানুষের স্বার্থরক্ষার জন্যে অঙ্গীকারবদ্ধ।


 

  • ভারতের মতো একটি দেশ যেখানে ভিন্ন ধর্ম, বিশ্বাস এবং চিন্তা-ভাবনার মানুষ একসঙ্গে বসবাস করেন। কিন্তু সকলেরই স্বার্থ খুব সুনিপুনভাবে রক্ষা করা হয়েছে ভারতের সংবিধানে


 

  • বর্তমান সরকারের উচিত, সেই সংবিধানের আলোয় এক নতুন ভারত তৈরি করা


 

  • ভারত কোনও দিনও ভুলবে না ২৬/১১-র মুম্বই হামলার ঘটনাকে। সেদিনের ঘটনায় যেসমস্ত সাধারণ নাগরিক, পুলিশকর্মী, নিরাপত্তাকর্মীরা প্রাণ হারিয়েছিলেন, তাঁদের সকলকে সেলাম জানিয়েছেন মোদী। তাঁদের বলিদান কেউ কখনও ভুলবে না।


 

  • সন্ত্রাসবাদ হল মানবসভ্যতার সামনে সবচেয়ে বড় আতঙ্কের নাম। সময় হয়েছে, সারা বিশ্বের সমস্ত দেশ একজোট হয়ে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়ুক।


 

  • ভারত হচ্ছে ভগবান বৌদ্ধ, মহাবীর, গুরুনানক, মহাত্মা গাঁধীর মতো একাধিক মানুষের জন্মস্থান। এঁরা সকলেই শান্তির বার্তা দিয়েছেন। সেই সামাজিক ভিত্তিকেই সন্ত্রাসবাদীরা ভেঙে দিতে চেয়েছে, মন্তব্য মোদীর। কিন্তু তাদের চেষ্টাকে ব্যর্থ করে প্রত্যেক ভারতবাসীর উচিত একটি সুন্দর, বিভেদহীন, শান্ত ভারত তৈরি করা।