নয়াদিল্লি: কোনও কিছুতেই হাল ছাড়ার পাত্র ছিলেন না তিনি। জলপাই রঙের উর্দিই ছিল তাঁর একমাত্র স্বপ্ন। আর সেই স্বপ্ন পূরণে অনেকবারই সাফল্য আসেনি। কিন্তু তা বলে স্বপ্নের পিছু ধাওয়া করতে ছাড়েননি তিনি। অনেকের কাছেই ১৩ সংখ্যাটা অপয়া। কিন্তু প্রবল জেদের মালিক কর্নেল আশুতোষ শর্মা ওসব নিয়ে একেবারেই মাথা ঘামানোর মানুষ ছিলেন না। তাঁর কাছে ওই সংখ্যাই শুভ হয়ে উঠেছিল।
উত্তর কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জঙ্গিদের সঙ্গে গুলি বিনিময়ে নিরাপত্তা বাহিনীর পাঁচ জওয়ান প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম কর্নেল শর্মা, ২১ রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের সেকেন্ড কমান্ডিং অফিসার।


ভাইয়ের কথা বলতে গিয়ে বারবার ডুকরে কেঁদে ওঠেন তাঁর দাদা পীযূষ। তিনি বলেছেন, ও নিজের মতো চলতে পছন্দ করত। কোনও বাধা এলেও তোয়াক্কা করত না। ওর একমাত্র স্বপ্ন ছিল সেনা, অন্য কোনও কিছু নয়।
জয়পূরের একটি ওষুধ সংস্থার কর্মী পীযূষ বলছেন, সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে আশুতোষ মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন।সাড়ে ছয় বছর ধরে তেরো বারের  চেষ্টায় অবশেষে  সফল হন। তারপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি কর্নেল আশুতোষকে।
২০০০-র প্রথম দশকের গোড়ার দিকে আশুতোষ সামরিক বাহিনীতে যোগ দেন।
ভাইয়ের অসংখ্য স্মৃতি মনে তরতাজা। সেই স্মৃতিগুলির কথা জানাতে গিয়ে আবেগে গলা বুজে আসছিল পীযূষের। চোখের জল সামলে তিনি বলেছেন, গত ১ মে ভাইয়ের সঙ্গে শেষবার কথা হয়েছিল তাঁর।
পীযূষ বলেছেন, সেদিন ছিল রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের রেইজিং ডে। আমাদের জানিয়েছিল, কোভিড-১৯ অতিমারির মধ্যে কীভাবে দিনটি উদযাপন করা হয়েছিল। আমি ওকে সবসময়ই সতর্ক করতাম। সাবধান করলে ওর একটাই কথা ছিল- আমার কিছু হবে না, দাদা।
কিছুদিন আগেই কর্নেল শর্মা কয়েকটি ছবি পাঠিয়েছিলেন, সেগুলি এখন তাঁর পরিবারের কাছে স্মৃতি। কান্না ভেজা গলায় পীযূষ বলেছেন, যদি জানতাম যে ওর সঙ্গে শেষবার কথা বলছি, তাহলে ওই কল ছাড়তামই না।
পীযূষের কাছেই ছিল কর্নেল শর্মার ষষ্ঠ শ্রেণীর পড়ুয়া মেয়ে তমান্না। এখনও সবকিছু বোঝার মতো বয়স ওর হয়নি। বাবা যে আর ফিরবে না, তা হয়ত সেভাবে বুঝে উঠতে পারছিল না তমান্না। ভাইঝি-কে জড়িয়ে পীযূষ বলেছেন, ওর সাহসী বাবার মতো ও-ও সাহসী মেয়ে। ও ঠিক হয়ে যাবে।