চেন্নাই: লাদাখে কথার খেলাপ করে বিনা প্ররোচনায় চিনের হামলায় কর্নেল-সহ ২০ জন সেনা জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে। পাল্টা ভারতের জবাবে চিনা পক্ষের হতাহত ৪৩ জন। চিনের এই বিশ্বাসঘাতকতাপূর্ণ হামলায় নিহতদের মধ্য রয়েছেন কে পাঝানি। কয়েকদিন আগেই পরিবারের লোকজন পাঝানির অভাব খুব বেশি করে অনুভব করেছিলেন। নতুন বাড়ি তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। এই খুশিতে ৩ জুন পরিবারের লোকজন একত্রিত হয়েছিলেন। আর ওই দিন ছিল পাঝানির ৪০ তম জন্মদিন।
তামিলনাড়ুর দক্ষিণের জেলা রামনাথপুরমের কাডুক্কালিয়ুরের বাড়িতে গত জানুয়ারিতে এসেছিলেন ভারতীয় সেনার এই বীর জওয়ান। গৃহপ্রবেশের অনুষ্ঠানের জন্য ফেরার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু জুনের প্রথম সপ্তাহে টেলিফোনে তিনি জানিয়েছিলেন, এখন আসার ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে।
সীমান্তে কর্মরত জওয়ানদের প্রচলিত রীতি অনুসারে, পূর্ব লাদাখের উপত্যকায় কী চলছে, সে সম্পর্কে বাড়ির লোকেদের কিছুই জানাননি তিনি। স্ত্রী বানাথি দেবী জানিয়েছেন, পাঝানি শুধু বলেছিলেন যে, নতুন একটা দায়িত্ব এসেছে। এখন খুব তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরা সম্ভব নয়। আর শুধু বলেছিলেন, এখানে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ব্যস, এটুকুই।


স্বামীর মৃত্যুর খবরে বিধ্বস্ত বানাথি দেবী। বাবা যে আর ফিরবে না, তা এখনও বুঝেই উঠতে পারেনি তাঁদের ১০ বছরের ছেলে ও ৮ বছরের মেয়ে।
পাঝানির এক ছোট ভাইও সেনাবাহিনীতেও রয়েছেন। তিনিই পাঝানির মৃত্যুর দুঃসংবাদ বাড়ির লোকদের জানিয়েছিলেন।
বাড়িতে রয়েছেন পাঝানির বৃদ্ধ বাবা-মাও।
কৃষক পরিবারের সন্তান পাঝানি মাত্র ১৮ বছর বয়সে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। গ্রামের স্কুলে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনাপর পর তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য থোতুকুডি জেলার তিরুচেন্দুরে চলে যান।
বাড়ির লোকজন জানিয়ছেন, পাঝানি ছিলেন কলা বিভাগের স্নাতক। ২১ বছর তিনি সেনাবাহিনীতে ছিলেন। গৃহপ্রবেশের সময় তিনি বাড়িতে আসতে পারেননি। এতে তাঁর খারাপ লেগেছিল..তবে আগামী বছর বাড়ি আসবেন বলে জানিয়েছিলেন।
ভারত ও চিনের এ ধরনের বিরল সংঘর্ষে শহিদ হয়েছে বীর জওয়ান পাঝানি। তিনি প্রায়ই একটা স্বপ্নের কথা বলতেন। আর তা হল, তাঁর ছেলেও বড় হয়ে সামরিক বাহিনীতেই যোগ দেবে এবং তাঁর থেকে উচ্চপদে কাজ করবে।
বুধবার নিজের শহরে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে পাঝানির।

শহিদ জওয়ান পাঝানির পরিবারকে ২০ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য ঘোষণা করেছে তামিলনাড়ু সরকার।  সেইসঙ্গে পরিবারের একজনকে সরকারি চাকরি দেওয়ার কথাও জানানো হয়েছে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের পক্ষ থেকে।