নয়াদিল্লি: মাসুদ আজহার, যাকে নিজেদের হেফাজতে পাওয়ার জন্য একাধিকবার পাকিস্তানের কাছে আর্জি জানাচ্ছে ভারত, সেই কিনা সশরীরে হিল্লি-দিল্লি করে গিয়েছেন। হ্যাঁ, সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের আঁতুড় ঘর জইশ-ই-মহম্মদের প্রতিষ্ঠাতা মাসুদ আজহারকে নিয়ে এমনই বিস্ফোরক রিপোর্ট দিয়েছে দেশের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় সংস্থা। ১৯৯৪ সালে ঢাকা থেকে দিল্লি এসেছিল মাসুদ আজহার। ভারতে এসে দিল্লির ইন্দিরা গাঁধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেই প্রথম পা রেখেছিল সে। তার কাছে ছিল পর্তুগিজ পাসপোর্ট। যা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন দায়িত্বে থাকা ইমিগ্রেশন অফিসাররা। 'পর্তুগিজদের মতো দেখাচ্ছে না', এই প্রশ্নই মাসুদ আজহারকে করেছিলেন অফিসাররা। তবে সেবার মাসুদ আজহার তাদের চোখে ধুলো দিয়ে বেরিয়ে এসেছিল। ইমিগ্রেশন অফিসারদের মাসুদ জানিয়েছিল, সে আসলে গুজরাতি! গুজরাতেই জন্ম হয়েছে তার। যা শুনে আর কোনও ছানবিন ছাড়াই মাসুদের পাসপোর্টে স্ট্যাম্প মেরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। এই তথ্যই উঠে এসেছে সম্প্রতি প্রকাশিত কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা সংস্থার রিপোর্টে।


প্রসঙ্গত, ২০০১ সালে সংসদ হামলা ও পুলওয়ামায় জঙ্গি নাশকতার মতো কার্যকলাপে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত রয়েছে মাসুদ আজহারের সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদ।


ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, মাসুদ আজহার ভারতে এসে ঘুরেছিল উত্তর প্রদেশের দুটি শহরে। দেওবন্দ ও লখনউ, এই দুটি শহরেই গিয়েছিল পাকিস্তানের মদতপুষ্ট সন্ত্রাসী। ওই রিপোর্টে এও দাবি করা হয়েছে, মাসুদ আজহার সাহারানপুরের তবলিক-উল-জামাত নামের একটি মসজিদেও রাত কাটিয়েছে। সেখান থেকেই ট্যাক্সি চেপে দিল্লি এসেছিল মাসুদ। তারপর রাজধানীর চাণক্যপুরীর অশোক হোটেলেও থেকেছে জইশ-ই-মহম্মদের প্রতিষ্ঠাতা। দিল্লিতে তবলিগ-উল-জামাতের কেন্দ্র নিজামুদ্দিনেও এসেছিলেন সে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তদন্তকারীদের নিজেই এই সব তথ্য দিয়েছিল মাসুদ আজহার।


নথিভুক্ত বয়ান অনুযায়ী মাসুদ আজহার নাকি ১৯৯৪ সালের ৬-৭ ফেব্রুয়ারি বাসে চেপে লখনউ এসেছিল। সেখানেও নিজের পরিচয় লুকিয়ে রেখেছিল এই সন্ত্রাসী। পরে সেখান থেকে আকাশপথে জম্মু-কাশ্মীরের শ্রীনগরে যাওয়ার কথা ছিল তার। মাসুদ আজহার নিজেই জানিয়েছে, হরকত-উল-মুজাহিদিন ও হরকত-উল-জিহাদ আল-ইসলাম, এই দুটি সংগঠনকে মিলিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যও ছিল তার ভারতে আসার অন্যতম একটি কারণ। আর সেই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সশস্ত্র জঙ্গি আফগানির সঙ্গেও সাক্ষাত্ করে সে। তবে ফেরার পথে অনন্তনাগেই তাকে ধরে ফেলে ভারতীয় গোয়েন্দারা।


মাসুদের সঙ্গে থাকা ফারুখ নামের এক জঙ্গি পালালেও ধরা পড়েছিল আফগানি ও জইশ-ই-মহম্মদ প্রধান। উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত ভারতীয় জেলেই বন্দি ছিল মাসুদ। পরে জেল থেকে পালাতে সক্ষম হয়েছিল মাসুদও। মাসুদের সঙ্গে জেল থেকে পালিয়েছিল আরও দুই জঙ্গি। ওই বছরই ভারতীয় একটি বিমান অপহরণ করে মাসুদ সহ ওই দুই জঙ্গিকে আফগানিস্তানের কান্দাহারে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিল পাক মদতপুষ্ট জঙ্গি সংগঠন।