নয়াদিল্লি: মাসুদ আজহারকে ‘জঙ্গি’ ঘোষণা করার দাবি তুলে ফের রাষ্ট্রসংঘের দ্বারস্থ ভারত। অন্যদিকে অতীতে মাসুদকে নিষিদ্ধ করার জন্য ভারতের দাবির বিরুদ্ধাচরণ করার জন্য চিন সম্পর্কে ‘নতুন ভাবনাচিন্তা’ শুরু করছে নয়াদিল্লি।

কিছুদিন আগে এই রাষ্ট্রসংঘে মাসুদকে জঙ্গি ঘোষণা করতে গিয়ে চিনের আপত্তিতে ধাক্কা খেয়েছে ভারত। কিন্তু, মাসুদকে নিয়ে যে তারা হাল ছাড়বে না, তা এদিন ফের স্পষ্ট করে দেয় নয়াদিল্লি। রাষ্ট্রসংঘের দ্বারস্থ হয়ে ভারত আবার জানিয়েছে, পাক-মদতপুষ্ট নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জয়েশ-ই-মহম্মদ প্রধান মাসুদ আজহার পঠানকোট হামলার হ্যান্ডলার ছিল। তার সংগঠন তালিবানের থেকে অস্ত্র প্রশিক্ষণ পেয়েছে। ভারত আরও জানিয়েছে, মাসুদ ও তার জঙ্গি সংগঠন জয়েশ দীর্ঘদিন ধরেই ভারত-বিরোধী কার্যকলাপে মদত দিয়ে চলেছে। পঠানকোট সহ বিভিন্ন সময়ে ভারতে নাশকতামূলক হামলার পরিকল্পনা করেছে।

পঠানকোটে মাসুদের যুক্ত থাকার প্রমাণ দিতে গিয়ে ভারত জানিয়েছে, হামলাকারীরা সকলেই জয়েশ জঙ্গিগোষ্ঠীর সক্রিয় সদস্য ছিল। তাদের হ্যান্ডলাররা জয়েশের শীর্ষস্থানীয় নেতা ছিল। মৃত জঙ্গিদের থেকে উদ্ধার হওয়া নথি থেকেও প্রমাণ হয়েছে যে তাদের সঙ্গে মাসুদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। রাষ্ট্রসংঘে ভারত জানায়, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈবা প্রধান হাফিজ সঈদ এবং হিজবুল মুজাহিদিন প্রধান সঈদ সালাউদ্দিনের সঙ্গে এই হামলার আগে বৈঠক করেছিল মাসুদ। ভারত জানিয়েছে, ২০০১ সালে সংসদ হামলার কুচক্রী আফজল গুরুর ফাঁসির ‘বদলা’ নেওয়ার জন্যই এই হামলার ছক কষা হয়েছিল। পেশ করা নথিতে বলা হয়, এই হামলার জন্য তালিবানের থেকে জঙ্গিরা অস্ত্র প্রশিক্ষণও পেয়েছিল।

সাম্প্রতিক অতীতে মাসুদ-ইস্যুতে রাষ্ট্রসংঘের দ্বারস্থ হয়েছিল ভারত। সেখানে নিরাপত্তা পরিষদের সামনেও একই দাবি পেশ করেছিল ভারত। কিন্তু, পাকিস্তানের চাপে নিজের ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করে ভারতের সেই দাবি খারিজ করে দেয় নিরাপত্তা পরিষদের অন্যতম স্থায়ী সদস্য চিন। বেজিং জানায়, ভারতের দাবি মেনে মাসুদকে জঙ্গি প্রতিপন্ন করা সম্ভব নয়। কারণ হিসেবে তারা জানায়, যে তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে ভারত এই দাবি করছে, তা যথাযথ নয়।

মাসুদ-কাণ্ডে বেজিংয়ের এই পদক্ষেপ নয়াদিল্লি যে ভাল চোখে দেখছে না, তা পরিষ্কার। এর প্রতিক্রিয়াস্বরূপ  চিনকে ‘সমস্যা বা উদ্বেগ সৃষ্টি করা’ রাষ্ট্রের তালিকায় রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরেই চিন ভারতের ‘উদ্বেগ’ তালিকার সদস্য। কিন্তু, সাম্প্রতিক অতীতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্যোগে ভারত-চিন মৈত্রী নতুন গতি পায়। ফলে, চিনকে তাই এই নেতিবাচক তালিকা থেকে সরিয়ে দেওয়ার ভাবনাচিন্তা করছিল ভারত। এর ফলে, এদেশে চিনা বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু, মাসুদকে নিয়ে চিনের এহেন আচরণের পর ফের ভারত নতুন করে ভাবনাচিন্তা করতে বাধ্য হয়েছে।