ময়ূরভঞ্জ: একবিংশ শতকে বিজ্ঞানের অগ্রগতি মানুষের জীবন এখনও অনেক মসৃণ করে দিয়েছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র, হাতে হাতে স্মার্টফোন, ইন্টারনেটে সমস্ত তথ্য় আহরণের সুযোগ, চিকিৎসা ব্যবস্থার সামগ্রিক অগ্রগতি, মায় ভিন গ্রহে পর্যন্ত পাড়ি জমাচ্ছে মনুষ্যসৃষ্ট স্পেসশিপ। অথচ সমাজ কি এখনও সম্পূর্ণ কুসংস্কারমুক্ত হতে পেরেছে? উত্তরটা হল, না। এখনও সমাজের প্রত্যেক পরতে জড়িয়ে রয়েছে অন্ধবিশ্বাস। আর তা থেকে বাঁচতে এখনও বুজরুকির শরণাপন্ন হয় মানুষ।

যার নবতম উদাহরণ দেখা গেল ওড়িশায়।

কুসংস্কার বহু সামাজিক গোষ্ঠীর বিশ্বাসে এখনও আধিপত্য বিস্তার করে চলেছে। ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার এই ঘটনার কথাই ধরুন। হো উপজাতির দুই শিশুর নির্দিষ্ট বয়সের আগেই দাঁত গজাতে শুরু করেছিল। যা আমাদের কাছে দুধের দাঁত হিসাবে পরিচিত। সন্তানদের এত তাড়াতাড়ি দাঁত গজাতে দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে পরিবার। এতটাই যে, তাঁরা ধরেই নেন এর নেপথ্যে রয়েছে কোনও অশুভ শক্তির হাত। আর সেই অশুভ শক্তিকে অকেজো করতে কুসংস্কারের দ্বারস্থ হল ওই শিশুদের পরিবার। কী করা হল? ওই দুই শিশুর বিয়ে দেওয়া হল বিপরীত লিঙ্গের কুকুরের সঙ্গে। স্থানীয় বিশ্বাস হল, নির্দিষ্ট বয়সের আগে শিশুদের দাঁত জন্মালে তাদের ওপর প্রেতাত্মার প্রভাব থাকতে পারে। আর সেই অভিশাপ থেকে মুক্তির একমাত্র পথ হচ্ছে, বিপরীত লিঙ্গের কুকুরের সঙ্গে তাদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া। তাতেই নাকি কেটে যাবে অশুভ শক্তির প্রভাব। সেই বিশ্বাস থেকেই ময়ূরভঞ্জে এমন ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছে ওই দুই শিশুর পরিবার।

শুক্রবার ময়ূরভঞ্জ জেলার সুক্রুলি ব্লকের দাদুশাহি গ্রামে দুই শিশুর উপরের মাড়ির মধ্য দিয়ে দাঁত গজাতে শুরু করায় দুটি পরিবার একটি কুকুরের সঙ্গে তাদের পুত্রসন্তানদের বিয়ে দিয়েছিল। দেবেন চত্তর এবং নরেন পুর্টি অশুভ আত্মাকে কাবু করার এই প্রথাটি পালন করেন। যা মকর সংক্রান্তি এবং শিবরাত্রির মধ্যবর্তী সময়ে বহু যুগ ধরে স্থানীয় হো সম্প্রদায় অনুসরণ করে আসছে।

স্থানীয় এলাকায় দুটি রাস্তার সংযোগস্থলে পুর্টি তাঁর ছেলের "বিবাহ" অনুষ্ঠান পালন করেন। দুটি বাচ্চাকে বর এবং কুকুরটিকে কনে হিসাবে ধরা হয়েছিল। যদিও ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে বিজ্ঞানমনস্ক শিক্ষিত সমাজ।