নয়াদিল্লি: প্রথমে পাঠানকোট, তারপর উরি, নাগরোটা। নিরাপত্তা বাহিনীর ছাউনিতে একের পর এক হামলা। এমনকী গতকালও ইঞ্জিনিয়ারিং সুরক্ষা বাহিনীতে গুলিবৃষ্টি। বারবার জঙ্গি হামলা প্রমাণ করেছে, ভারতীয় সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনী কোনওমতেই সুরক্ষিত নয়। প্রশ্ন উঠেছে, দেশকে যাঁরা সুরক্ষা দেন, তাঁদের সুরক্ষার বন্দোবস্ত জোরদার নয় কেন। এই পরিস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে সেনা, বায়ুসেনা ও নৌসেনার তিন প্রধানের সঙ্গে বৈঠকে বসলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকর। ঠিক হয়েছে, সেনা ছাউনি এবার থেকে ই-সারভেইল্যান্স বা ইলেকট্রনিক নজরদারির আওতায় আনা হবে, যাতে কোনওভাবেই জঙ্গি অনুপ্রবেশ না হয়।

পাঠানকোট, উরি, নাগরোটা। শুধু গত বছরই তিন তিনবার পাঁচিল টপকে, রক্ষীর চোখে ধুলো দিয়ে সেনা ছাউনিতে ঢুকে পড়ে পাকিস্তানি জঙ্গিরা। নাগরোটায় মারা যান ৭ সেনা কর্মী, উরিতে ১৯জন। পাঠানকোটেও ৭ বায়ু সেনা কর্মীর মৃত্যু হয়। এই পরিস্থিতিতে অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফিলিপ ক্যাম্পোসের প্রস্তাব অনুসারে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সেনা, বায়ু সেনা ও নৌ সেনা- তিন বিভাগেরই সেনা ছাউনির চারপাশের নিরাপত্তা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে।

পাঁচিল, রক্ষীদের নজরদারি, কাঁটাতারের বেড়ার মত নিরাপত্তার ব্যবস্থা তো থাকছেই। এছাড়াও নিয়ন্ত্রণরেখার আশপাশের এলাকায় ইলেকট্রনিক নিরাপত্তারও ব্যবস্থা করছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। আনা হচ্ছে সারভেইল্যান্স ক্যামেরা, এনট্রি ইনট্রুশন সিস্টেম, ইনফ্রা রেড লাইট ও সিকিউরিটি লাইট। এনট্রি ইনট্রুশন সিস্টেম বা ইআইডি-র মাধ্যমে সেনা ছাউনির চারপাশের পাঁচিলের আশপাশে যে কোনওরকম নড়াচড়া চিহ্নিত করা যাবে, সতর্ক করা যাবে পাহারাদারদের।

সেনা, বায়ু সেনা ও নৌ সেনা প্রধানের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রকের বিস্তারিত আলোচনা ইতিমধ্যেই সারা। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, নিরাপত্তাগত এই সব ব্যবস্থা কার্যকর করতে তাঁদের অনুরোধ করা হয়েছে। পাশাপাশি ডিসেম্বরে স্বরাষ্ট্র সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও কথা হয়েছে সেনা ছাউনির নিরাপত্তা ও বারবার জঙ্গি হামলা নিয়ে।

গত বছর সেনা ছাউনিতে যে তিনটি জঙ্গি হামলা হয়েছে, তাতে প্রতিবারই দেখা গেছে, অল্প কয়েকজন জঙ্গি সেনার পোশাকে সজ্জিত হয়ে এসে ভোরবেলা হামলা চালাচ্ছে। ঠিক ওই সময় রক্ষীদের ডিউটি হাতবদল হয়। পাঠানকোট, নাগরোটার ক্ষেত্রে তখনই পাঁচিল টপকেছে জঙ্গিরা আর উরিতে কাঁটাতারের বেড়া কেটেছে।

সেনাবাহিনী প্রস্তাব দিয়েছে, সেনা ছাউনির আশপাশের এলাকায় সাধারণ মানুষের বসবাসের ওপর নজর রাখা হোক। দেখা হোক, নতুন কারা আসছে, কারা বসবাস শুরু করছে। ছাউনির চারপাশের গাছ ছেঁটে ফেলার কথাও বলেছে তারা, কারণ, পাঠানকোট ও নাগরোটা হামলায় গাছে চড়েই জঙ্গিরা পাঁচিল টপকেছিল।