পাটান: একটার পর একটা ইস্যুতে ব্যর্থতা প্রকট হয়ে যাচ্ছে। নরেন্দ্র মোদী বারবার গুজরাত নির্বাচনের এজেন্ডা বদলাচ্ছেন। বললেন রাহুল গাঁধী। পাটানের হারিজে নির্বাচনী জনসভায় কংগ্রেস সহ সভাপতির বক্তব্য, সত্যিটা বেরিয়ে পড়লে কী হয়, চমত্কার দেখা যাচ্ছে। মোদীজী প্রথমে বললেন, নর্মদার দলের ইস্যুতে ভোটে লড়বেন। কিন্তু বাস্তবে সেই জল গ্রামে গ্রামে এল না, চলে গেল টাটার ন্যানো কারখানায়। ২-৩ দিন বাদে উনি বলতে থাকলেন, তিনি ওবিসি ইস্যুতে ভোটে লড়বেন। তাতেও লাভ হল না। তারপর ২২ বছরের উন্নয়নের জোরে ভোটে লড়ার কথা বললেন। তাও কাজে এল না। তারপর মোদীজী বললেন, মনিশঙ্কর আয়ার আমার সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করেছেন। এটা হবে আমার ভোটের ইস্যু।
বন্যার সময় কংগ্রেস নেতারা গুজরাতের মানুষের দিকে ফিরে তাকাননি, মোদীর অভিযোগের পাল্টা রাহুলের প্রশ্ন, মোদী কি দলিত সম্প্রদায়ের যুবকদের পিটুনি দেওয়ার পর ওদের বাড়ি গিয়েছিলেন? গত বছর উনায় চার দলিত যুবককে গোহত্যার অভিযোগে গণপিটুনি দিয়েছিল স্বঘোষিত গোরক্ষকরা। সেই ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল, যা নিয়ে সরগরম হয়েছিল গোটা রাজ্য।
হারিজের পাতিদার সম্প্রদায়কে কাছে টানার কৌশল হিসাবে রাহুল প্রশ্ন করেন, পুলিশ পাতিদার সংরক্ষণ আন্দোলনের সময় তাদের বাড়ি বাড়ি ঢুকে ছেলেদের গুলি করেছিল বলে অভিযোগ ওঠার পর মোদী কি তাদের কাছে গিয়েছিলেন?
একটি রিপোর্ট উদ্ধৃত করে রাহুল দাবি করেন, মোদী সরকার ৩৭০০ কোটি টাকা বিজ্ঞাপনে ব্যয় করেছে। তার মানে এই সরকার সব পয়সা ঢালছে নিজের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে, শিল্পপতিদের পিছনে। আমাদের সরকার সেই অর্থ খরচ করবে আপনাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যের জন্য। গুজরাতে ক্ষমতায় এলে ১০ দিনের মধ্যে কৃষকদের ঋণ মকুব করবে বলেও ঘোষণা করেন রাহুল। কেন্দ্র কৃষকদের সঙ্কটের প্রতি উদাসীন, শিল্পপতিদের স্বার্থরক্ষায় ব্যস্ত বলে দাবি করে রাহুল বলেন, এনডিএ সরকার ১০ জনের বেশি শিল্পপতির কয়েক লক্ষ কোটি টাকা কর মকুব করেছে, আর অরুণ জেটলি বলেছেন, কৃষকদের ঋণ মকুব করা আমাদের পলিসি নয়। কিন্তু কী অপরাধ চাষিদের, ওরা মার্সিডিজ চাপেন না, চার্টার্ড বিমান চড়েন না, তাই?
বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের ছেলে জয় শাহের কোম্পানির টার্নওভার ও রাফালে ফাইটার জেট ডিল নিয়ে ওঠা অভিযোগের প্রতি ইঙ্গিত করে রাহুল বলেন, গোটা প্রচারপর্বে মোদীজী দুর্নীতি নিয়ে উচ্চবাচ্যই করেননি। ভোটপ্রচারে যা-ই বলুন না কেন, রাফালে বা জয় শাহ ইস্যু থেকে পালাতে পারবেন না উনি। ২০০টা ভাষণ দুর্নীতি সম্পর্কে কিছু না বললেও প্রধানমন্ত্রী তা এড়াতে পারবেন না। গুজরাত স্থির করে ফেলেছে, শিল্পপতিদের নয়, আগামী সরকারটা হবে গরিব, চাষি, শ্রমিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের। প্রধানমন্ত্রীর এখন বলার মতো একটাই বিষয়। গতকাল উনি ৬০-৭০ শতাংশ সময় বলেছেন আমায় নিয়ে। কিন্তু এই নির্বাচন মোদীজি, রাহুলজি, সোলাঙ্কি, বিজেপি বা কংগ্রেস নিয়ে নয়, গুজরাতের মানুষের ভবিষ্যত্ নিয়ে। রাহুলের দাবি, ২২ বছরের শাসনে বিজেপি শুধু ৫-১০ জন শিল্পপতির স্বার্থে কাজ করেছে, গরিবের জমি কেড়ে তুলে দিয়েছে টাটা ন্যানোকে। কংগ্রেস এমএনরেগা প্রকল্পের জন্য ৩৫০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল, আর বিজেপি সরকার ন্যানো কারখানার জন্য ৩৩০০০ কোটি টাকা দিয়েছে। নর্মদার জল পাঠানো হয়েছে সেখানে। আপনারা শুধু রাতে পান, আর ওই কারখানা ২৪ ঘন্টা বিদ্যুত্ পায়। মুন্দ্রার গ্রামের জমি মিটারে ১ টাকা দরে দেওয়া হয়েছে আদানিকে, তারা আবার পরে সেই জমি সরকারকে বেচেছে ৩০০০ টাকা মিটার দরে।