নয়াদিল্লি: কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ করলেন রাহুল গাঁধী। তাঁর তোপ, ‘প্রধানমন্ত্রী আজ আমাদের মধ্যযুগে পিছিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। মানুষ কী খাচ্ছেন, সেটার বিচার করে তাঁদের হত্যা করা হচ্ছে। বিশ্বাসের জন্য মানুষকে মারধর করা হচ্ছে। এই কদর্য হিংসার ঘটনা দেশকে লজ্জিত করেছে। ভারতের দর্শন ও ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত ভালবাসা ও সমবেদনা। এই ধরনের ঘটনায় সেটা ধাক্কা খাচ্ছে। আমাদের মহান দেশের যে পরিমাণ ক্ষতি করা হয়েছে, যতবারই আলিঙ্গন করা হোক না কেন, তার ক্ষতিপূরণ করা সম্ভব নয়।’

বিজেপি-কে আক্রমণ করে রাহুল বলেছেন, ‘আজ বিজেপি দেশজুড়ে আগুন ও হিংসা ছড়ানোর চেষ্টা করছে। একমাত্র কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরাই এই আগুন ও হিংসা থামাতে পারেন। ওরা ভাঙে, আমরা গড়ি। ওরা আগুন জ্বালায়, আমরা নেভাই। ওরা ক্রোধ দেখায়, আমরা ভালবাসা। এটাই ওদের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য।’

আজ মা সনিয়া গাঁধীর হাত থেকে কংগ্রেসের ব্যাটন তুলে নেন রাহুল। ৪৭ বছরের রাহুল আনুষ্ঠানিকভাবে কংগ্রেসের সভাপতিত্ব গ্রহণ করলেন। দলের ২৪ আকবর রোডের সদর দফতরে হয় এই অনুষ্ঠান। সনিয়া ছাড়াও অনুষ্ঠানে ছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ, দলের সব প্রবীণ নেতানেত্রীরা। সভাপতি হওয়ার পর রাহুল নিজের প্রথম বক্তৃতায় বলেন, ‘কংগ্রেস সব ভারতীয়কে সম্মান জানায়। এমনকী, বিজেপি-র প্রতিও আমাদের সম্মান আছে। আমরা ঘৃণা দিয়ে ঘৃণার মোকাবিলা করব না। ওরা কণ্ঠরোধ করে, আমরা সবাইকে বলার সুযোগ দিই। ওরা অসম্মান করে, আমরা শ্রদ্ধা জানাই ও পাশে দাঁড়াই।’

 


দীর্ঘ ১৯ বছর কংগ্রেসের দায়িত্ব সামলানোর পর আজ সনিয়া ছাড়লেন সভানেত্রী পদ। আবেগপূর্ণ বক্তৃতায় তিনি বলেন, এই কঠিন সময়ে রাহুল এক বিপজ্জনক ক্ষমতাধারীর মুখোমুখি হয়েছেন। এই চ্যালেঞ্জ সাহসের সঙ্গে গ্রহণ করেছেন তিনি, দলকে তিনি সঠিক দিশা দেখাবেন।

নেহরু-গাঁধী পরিবারের পঞ্চম সদস্য হিসেবে কংগ্রেসের সভাপতি হলেন রাহুল। সোমবার যখন তিনি দলের সভাপতি পদে নির্বাচিত হন, তখন দলের অভ্যন্তরীণ ভোটাভুটিতে তাঁকে চ্যালেঞ্জ করার কেউ ছিলেন না।

তবে রাজনীতিতে রাহুলের সামনের পথ মোটেই সুগম নয়। এ সপ্তাহেই শেষ হয়েছে গুজরাত ভোট, এই প্রথম দলীয় প্রচারে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। কিন্তু সব বুথফেরত সমীক্ষারই দাবি, কংগ্রেস ফের হারছে, ক্ষমতা ধরে রাখতে চলেছে বিজেপি। আবার হিমাচল প্রদেশের ভোটেও কংগ্রেসের হারার আশঙ্কা।

দলের ভেতরে রাহুলের পদোন্নতি নিয়ে দীর্ঘদিন আলোচনা চলছিল। সনিয়া থেকে দলের বরিষ্ঠ নেতানেত্রীরা- সকলেই বলে এসেছেন, রাহুলের জন্য রাস্তা পরিষ্কার, তিনি নিজেই ঠিক করবেন, কবে আরও বড় দায়িত্ব নেবেন। কিন্তু অনিচ্ছুক রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত রাহুল বারবার এড়িয়ে যাচ্ছিলেন দায়িত্ব। অবশেষে গুজরাতে ভোট চলাকালীন তিনি দলের ব্যাটন হাতে নিলেন।

২০১৩-র জানুয়ারিতে কংগ্রেসের সহ সভাপতি হন রাহুল। তখন থেকে কাজ করেছেন মা সনিয়ার সহকারী হিসেবে। কিন্তু কংগ্রেসের সভানেত্রী হিসেবে সবথেকে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকা সনিয়া ৭০ ছুঁয়েছেন, তাঁর শরীরও বিশেষ ভাল নেই। নিজের ওপর কাজের চাপ অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছেন, সামনে এগিয়ে দিয়েছেন রাহুলকে।

তবে দলীয় সভানেত্রীর পদ ছাড়লেও কংগ্রেস সংসদীয় দলের সভানেত্রী হিসেবে সনিয়া রয়ে যাবেন বলে মনে করা হচ্ছে।