ভোপাল: কৃষি আইন নিয়ে জটিলতা এখনও অব্যাহত। দেশজুড়ে আন্দোলনে কৃষকদের একাংশ। এর মাঝেই আত্মহত্যার চরম পথ বেছে নিলেন বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশের এক কৃষক। আর আত্মহত্যার আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে উদ্দেশ্য করে এক চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো বেচে দিয়ে ঋণ মিটিয়ে দেবেন।'


মধ্যপ্রদেশের মাটগুভান গ্রামের বাসিন্দা মুনেন্দ্র রাজপুতের নিজের প্রাণ বিসর্জন দেওয়ার কারণ হিসেবে উঠে এসেছে লাগামছাড়া বিদ্যুতের বিল। জানা গিয়েছে, তাঁর বকেয়া পড়ে গিয়েছিল প্রায় ৮৭ হাজার টাকা।

মুনেন্দ্রর ভাই লোকেন্দ্র সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘সরকারি কর্তাব্যক্তিদের কাছে বকেয়া মেটানোর জন্য কিছুটা সময় চেয়েছিল দাদা। লকডাউন উঠলেও সেভাবে লাভের মুখ না দেখার জেরেই ও একটু সময় চেয়েছিল, কিন্তু তা আর পাওয়া গেল না।’

জানা যাচ্ছে, করোনা অতিমারী রুখতে জারি হওয়া লকডাউনের সময় থেকেই প্রবল আর্থিক অনটনের মধ্যে পড়েছিলেন মুনেন্দ্র। লকডাউন উঠে গেলেও সেভাবে বাজারে বিক্রি করতে পারেননি তার ফলানো শস্য। যার ফলে বেশ টানাটানির মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছিল তাঁকে।

এর মাঝেই বকেয়া না মেটানোর কারণ দেখিয়ে স্থানীয় বিদ্যুৎ সংস্থা কেড়ে নেয় মুনেন্দ্রর মোটর সাইকেলের চাবি। চাবি দিয়ে দেওয়া হয় তার আটাকলেও। যে ঘটনার পরই চূড়ন্ত আশাহত হয়ে পড়েন তিনি। বেছে নেন চূড়ান্ত পথ। আর নিজের প্রাণ শেষ করে দেওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে লিখে রেখে যান মর্মস্পর্শী যে চিঠি।

স্থানীয় পুলিশ ইনস্পেক্টর কলমজিত সিংহ বলেছেন, আত্মহত্যার ঘটনা হিসেবে মৃত্যুটি নথিভুক্ত হয়েছে। গোটা ঘটনার তদন্ত চলছে। জানা গিয়েছে, মধ্যপ্রদেশের স্থানীয় বিধায়ক রাজেশ কুমার শুক্লা মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানের কাছে চিঠি লিখে গোটা ঘটনার ন্যায়বিচার দাবি করেছেন। যাদের জন্য কৃষকরা নিজেদের এভাবে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থাগ্রহণেরও দাবি জানিয়েছেন তিনি।

মধ্যপ্রদেশ সরকারের পক্ষ থেকে গোটা ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে বিবৃতি জারি করা হয়েছে। চত্তরপুরের স্থানীয় কালেক্টর মৃতের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণের কথাও জানিয়েছেন।

কিছুদিন আগে কৃষক-কেন্দ্রের সপ্তম দফার বৈঠকে তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার বা নূন্যতম সহায়ক মূল্য নিশ্চিত করা নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত এখনও গৃহিত না হলেও কৃষকদের দুটি দাবি মেনে নিয়েছে কেন্দ্র। যার মধ্যে একটি অতিরিক্ত বিদ্যুতের মাশুল প্রত্যাহার এবং ফসলের গোড়া পোড়ানোর ক্ষেত্রে কৃষকদের কোনওরকম আর্থিক জরিমানা না করা।