লখনউ: ভোটের এখনও এক বছর দেরি। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ জিততে এখন থেকেই অঙ্ক কষা শুরু করেছে সবকটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল। বিহারে মহাজোটবন্ধন থেকে আচমকা বেরিয়ে আসলেও গো বলয়ের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে কিন্তু সেই জোটের জন্যই উঠে পড়ে লেগেছেন মুলায়ম সিংহ যাদব। রাষ্ট্রীয় লোক দলের অজিত সিংহের সঙ্গে ইতিমধ্যেই তাঁর কথাবার্তা শুরু হয়েছে। বিষয়টি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও আরএলডি-কে মিত্রতার সঙ্কেত দিতে দলীয় কোনও প্রার্থীর বদলে অজিত সিংহকে রাজ্যসভায় পাঠানোর কথা ভাবছে সমাজবাদী পার্টি। জোট শক্তপোক্ত করতে কথা চলছে কংগ্রেসের সঙ্গেও। অজিতের ছেলে জয়ন্ত নাকি ইতিমধ্যেই রাহুল গাঁধীর সঙ্গে কথা বলেছেন।

বিজেপিই হোক বা এসপি- কংগ্রেস, ভোটের লড়াইয়ে কারও হাত ধরতেই আরএলডির কোনও আপত্তি নেই। মুলায়মের সঙ্গে কথার আগে বিজেপির সঙ্গে জোর কদমে আলোচনা চালাচ্ছিল তারা। এর আগে ২০০৪ আর ২০০৭-এ সমাজবাদী পার্টির নেতৃত্বাধীন সরকারে তারা থাকলেও ভোটের আগে জোট দুদলের মধ্যে আগে হয়নি। এখন কেন্দ্রে এনডিএ সরকারের দ্বিতীয় বর্ষ পূর্তি উপলক্ষ্যে উৎসবের জন্য উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুরকেই বেছে নিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। এই সাহারানপুর আবার অজিত সিংহের শক্ত ঘাঁটি। ফলে পায়ের তলার জমি হারানোর আশঙ্কাতেই সম্ভবত ভোটের এত আগে থেকে এসপির সঙ্গে জোটের ব্যাপারে আরএলডি আলোচনা শুরু করেছে। সমাজবাদী পার্টির অবশ্য ইচ্ছে, আরএলডি এসপির সঙ্গে মিশে যাক। কিন্তু তাতে রাজি নন অজিত সিংহ। বরং বাইরে থেকে জোট করার প্রস্তাব দিয়েছেন। যদিও আরএলডির সঙ্গে জোটে এসপি মধ্যেই একটা অংশের আপত্তি রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব ও দলের সাধারণ সম্পাদক রামগোপাল যাদব জোটে যেতে রাজি নন। তাঁদের কথায়, গত লোকসভা ভোটে গোহারান হারার পর দল হিসেবে আরএলডিই প্রায় নিশ্চিহ্ন হওয়ার মুখে। তাদের সঙ্গে জোটে গেলে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে ৮০-র বেশি বিধানসভায় এসপিকে হারতে হবে। তৃণমূল স্তরের কর্মীরাও এই জোট ভাল চোখে দেখবেন না। কিন্তু মুলায়ম ও শিবপাল যাদব চান, জোট হোক।

পাশাপাশি কংগ্রেসের ভোটযুদ্ধের মন্ত্রণাদাতা প্রশান্ত কিশোর আবার ব্যস্ত বারেবারে হারতে থাকা দলকে কীভাবে উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনে খানিকটা হলেও অক্সিজেন দেওয়া যায় তা নিয়ে। যে সব সম্ভাবনা নিয়ে তিনি চিন্তাভাবনা করছেন তার মধ্যে রয়েছে প্রিয়ঙ্কা ভঢরাকে সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তুলে ধরা। উল্টোদিকে যে বিএসপি গত বিধানসভা ও লোকসভা ভোটে কার্যত হারিয়ে গিয়েছিল, এবার ভোটে আগের জায়গা পুনরুদ্ধারের ব্যাপারে তারা আশাবাদী। দলীয় সুপ্রিমো মায়াবতী দলিতদের পাশাপাশি উচ্চবর্ণের ভোট ঝুলিতে পুরতে ২০০৭-এর রামধনু জোটের পথে হাঁটার চেষ্টা করছেন।

উল্টোদিকে বিজেপির সমস্যা হল, তরুণ কোনও মুখকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে তুলে ধরা, যাতে তিনি অখিলেশকে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন। কিন্তু এমন কোনও গ্রহণযোগ্য মুখ এখনও খুঁজে পায়নি তারা। স্মৃতি ইরানিকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু তাঁর গায়ে বহিরাগত তকমা, স্থানীয় কর্মীরা তাঁকে মানতে রাজি নন। এই মুহূর্তে রাজনাথ সিংহই সবথেকে গ্রহণযোগ্য মুখ। যদিও তাঁকে সামনে রেখে লড়ে এর আগে উত্তরপ্রদেশে হেরেছে বিজেপি।