বল্লভগড়: গোমাংস খাওয়ার গুজব প্রাণ কেড়েছে ছেলের। হরিয়ানায় চলন্ত ট্রেনে একদল উন্মত্ত দুষ্কৃতী পিটিয়ে মেরে ফেলেছে ১৬ বছরের কিশোর জুনেদকে। এই দুঃসংবাদ প্রথমে জুনেদের মা সায়রাকে জানাতেই পারেননি পরিবারের লোকজন। কিন্তু কিশোর ছেলের মর্মান্তিক মৃত্যুর খবরটা শুনে বিশ্বাস করতে পারেননি সায়রা। তারপর থেকেই বলে চলেছেন, আর কখনও ইদ পালন করতে পারব!কেন এমন ঘটল! কী করে সহ্য করব!


হরিয়ানার বল্লভগড়ের খাণ্ডাবালি গ্রামে শোকের আবহ। বৃহস্পতিবার রাতে দিল্লি থেকে ইদের বাজার সেরে তিন বন্ধুর সঙ্গে বাড়ি ফিরছিল জুনেদ। তিন সঙ্গী হাসিব, সাকির ও মহসিনের বাড়িও খাণ্ডাবালিতেই। মথুরাগামী ট্রেনে তাদের বেধড়ক মারধর করে একদল দুষ্কৃতী।

জুনেদ ওই মারধর সহ্য করতে পারেনি। অন্য তিনজন গুরুতর জখম। তারা জানিয়েছে, হামলাকারীরা তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছিল। 'দেশদ্রোহী', 'গোমাংস-খোর' বলে চলছিল গালিগালাজ। তাদের মাথার ফেজ টুপি টেনে ফেলে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে চলে দাড়ি ধরে টানাটানি আর মারধর।

রমজানের উপবাস রোজকার মতো একসঙ্গে ভাঙতে জুনেদের বাবা জালালুদ্দিন ছেলেকে আনতে বল্লভগড় স্টেশনে গিয়েছিলেন। ততক্ষণে ট্রেন চলে গিয়ছিল। কিন্তু স্টেশনে যে দৃশ্য দেখলেন তা কোনওদিন দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারেননি জালালুদ্দিন। স্টেশনে বসে রয়েছে হাসিম। রক্তাক্ত জুনেদ তার কোলে লুটিয়ে পড়ে।

পুত্র শোকে কাতর জালালুদ্দিন ওই নৃশংসতায় হতচকিত, স্তম্ভিত। বললেন, তাঁর ছেলের দেহ মেরে দলা পাকিয়ে দিয়েছে হামলাকারীরা। বুঝে উঠতে পারছেন না তিনি, মানুষ এত নিষ্ঠুর হতে পারে কীভাবে?

জালালুদ্দিন বলেছেন, ও তো শিশু। মাত্র ১৬ বছর বয়স। তাঁর বিস্ময়,  আমাদের প্রতি ওদের এত ঘৃণা যে এ রকম নির্মমভাবে জুনেদকে মেরে ফেলল!

পুলিশে দায়ের করা অভিযোগে ২০ বছরের হাসিব বলেছেন, ওখলা স্টেশনে ১৫-২০ জন ওঠে। তারা আমাদের আসন ছেড়ে দিতে বলে। এরপর তারা গালিগালিজ শুরু করে। তুঘলকাবাদ থেকে বল্লভগড় পর্যন্ত ওরা আমাদের মারতে মারতেই এসেছে। তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়।

আসাওটি রেল স্টেশনে তাঁদের ট্রেন থেকে ফেলে দিয়ে হামলাকারীরা চম্পট দেয় বলে জানিয়েছেন হাসিব।

জিআরপি জানিয়েছে, পালওয়াল হাসপাতালে মৃত্যু হয় জুনেদে। তার সঙ্গীদের আঘাতও গুরুতর।

রেলওয়ের পক্ষ থেকে এই ঘটনার নিন্দা করা হয়েছে। জিআরপি বিষয়টি খতিয়ে দেখছে বলে উত্তর রেলওয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।