পটনা: আরজেডি প্রধান লালুপ্রসাদ যাদবকে কেন্দ্র করে বিহারে কংগ্রেস দলে ভাঙনের চোরাস্রোত। কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধীর সঙ্গে দেখা করে ১১ জন বিধায়ক স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, লালুর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতেই হবে। না হলে জনসমর্থন আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে। দলীয় বিধায়কদের কথা মন দিয়ে শুনেছেন রাহুল। তবে তিনি বিশেষ কোনও মন্তব্য করেননি বলেই জানা গিয়েছে।

বিহারে কংগ্রেসের ২৭ জন বিধায়ক আছেন। তাঁদের মধ্যে ১৯ জনই আরজেডি-র সঙ্গে জোট ভাঙার পক্ষে। আরজেডি-র সঙ্গে জোট বজায় থাকলে কংগ্রেস ছাড়তেও তৈরি এই বিধায়করা। সপ্তাহখানেক আগেই জোট ভাঙার পক্ষে থাকা বিধায়কদের প্রতিনিধিরা নয়াদিল্লিতে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে দেখা করে এই দাবি জানান। কিন্তু সনিয়া তাঁদের দাবি মেনে নেননি। তিনি পাল্টা বলেন, লালুর মতো যে নেতারা বিজেপি-র বিরুদ্ধে লড়াই করছেন, তাঁদের সঙ্গে কংগ্রেসের জোট বজায় রাখতেই হবে। সভানেত্রীর এই মন্তব্যে সন্তুষ্ট হননি কংগ্রেস বিধায়করা। সেই ক্ষোভের কথা জানতে পেরেই তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে চান রাহুল। তবে অন্তত ৬ জন বিধায়ক দিল্লি যাননি। তাঁরা জানিয়েছিলেন, নিজেদের বিধানসভা কেন্দ্রে বন্যাত্রাণের কাজ করছেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিধায়করা একান্তে জানিয়েছেন, তাঁরা দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছেন না। সেই কারণেই রাহুলের সঙ্গে দেখা করতে দিল্লি যাননি।

কংগ্রেস সভানেত্রী ও সহ-সভাপতি সাধারণত রাজ্যের নেতাদের সঙ্গে ঘনঘন দেখা করেন না। কিন্তু এবার বিহারে দলে ভাঙনের আশঙ্কা থাকায় দলীয় বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক করছেন রাহুল। কিন্তু এই বৈঠকেও সঙ্কট দূর হয়নি। বিহারের কংগ্রেস প্রধান অশোক চৌধুরী রাহুলের সঙ্গে দেখা করতে দিল্লি যাননি। তিনি বেশ কয়েকজন বিধায়ককে নিয়ে দল ছাড়তে পারে বলে খবর। জুলাইয়ে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার যখন আরজেডি ও কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ভেঙে বিজেপি-র সঙ্গে জোট সরকার গড়েন, তখন রাহুলের সঙ্গে দেখা করতে দিল্লি যান অশোক। সেই সময় তাঁকে তিন দিন অপেক্ষায় রেখেছিলেন রাহুল। এবার তারই বদলা নিচ্ছেন অশোক।

লালু ও তাঁর সন্তানদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পরিপ্রেক্ষিতেই জোট ভাঙেন নীতীশ। কংগ্রেস বিধায়কদেরও বক্তব্য, লালুর সঙ্গে জোট থাকায় কংগ্রেসের বিশ্বাসযোগ্যতা ধাক্কা খাচ্ছে। অনেকে তো প্রকাশ্যেই লালুর সঙ্গে জোট ভাঙার পক্ষে সওয়াল করছেন। এই পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী লালুর সঙ্গে জোট নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করছেন সনিয়া-রাহুল। তাঁরা বিহারের নেতাদের পরামর্শ মেনেই পটনার গাঁধী ময়দানে লালুর ডাকে বিজেপি-বিরোধী সভায় যোগ দেননি। নিজেরা না গিয়ে প্রতিনিধি পাঠিয়েছিলেন। তবে সনিয়া দলের ভাঙন ঠেকাতে লালুর সঙ্গে জোট ভাঙার পথে হাঁটবেন কি না, সেটা এখনও স্পষ্ট নয়।