নয়াদিল্লি: চলতি অর্থবর্ষে সমবায় ও আঞ্চলিক গ্রামীন ব্যাঙ্কগুলির জন্য নাবার্ডের ঋণদানের সুযোগ ৩০ হাজার কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ১.২ লক্ষ কোটি টাকা করেছে কেন্দ্র। এই উদ্যোগে দেশের ৩ কোটি ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক, যাঁদের দুই হেক্টরের কম জমি রয়েছে, উপকৃত হবেন বলে মনে করা হচ্ছে। ফলস তোলার পরবর্তী সময়ের ব্যয় সঙ্কুলানের ক্ষেত্রে বর্দ্ধিত ঋণদানের এই সুবিধা কৃষকদের পক্ষে সহায়ক হবে।


কৃষকরা এখন রবি শষ্য বিক্রয়ের প্রক্রিয়ায় নিযুক্ত। সেইসঙ্গে তাঁদের আগামী খারিফ মরশুমের জন্য বীজ বপনের জন্য অর্থংস্থানের প্রয়োজন।
কেন্দ্রের পদক্ষেপকে সময়োচিত বলে মন্তব্য করেছে নাবার্ড চেয়ারম্যান হর্ষ কুমার ভানওয়ালা।তিনি বলেছেন, ঋণ শোধ স্থগিতের ঘোষণার পর এই সমবায় ও আরআরবি-গুলি সম্পদ বাড়ানোর ক্ষেত্রে সমস্যার মুখে পড়েছিল। কেন্দ্রের উদ্যোগের ফলে তারা এখন ঋণ দিতে পারবে।ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকরা সমবায় ও আরআরবি-র ওপরই মূলত নির্ভর করেন। কারণ, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির ঋণের পরিমাণের গড় এই ব্যাঙ্কগুলির থেকে কম। এখন ঋণদানের সুবিধা বাড়ানোয় আগামী খারিফ মরশুমের জন্য কৃষকদের বীজ ও সার ক্রয়ের ক্ষেত্রে কোনও বাধা থাকবে না।
অতিরিক্ত ঋণদানের পরিমাণ বৃদ্ধির পাশাপাশি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেছেন, কিষাণ ক্রেডিট কার্ড (কেসিসি)-র আওতার বাইরে থাকা আড়াই কোটি প্রধানমন্ত্রী-কিষাণ উপভোক্তা এক বিশেষ অভিযানের মাধ্যমে সরকারি ক্রেডিট নেটের আওতায় আসবেন। এ ধরনের প্রায় কৃষকদের মধ্যে ২ লক্ষ কোটি টাকার ঋণদান করা হতে পারে বলে কেন্দ্র আশা প্রকাশ করেছে। পশুপালন ও মত্স্য ক্ষেত্রে কৃষকরাও কেসিসি-র আওতায় আসবেন বলে তিনি জাানিয়েছেন। কৃষকরা কেসিসি-র মাধ্যমে কোনও আনুষঙ্গিক ছাড়াই এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ পেতে পারেন।
যাঁরা সঠিক সময়ে ঋণ শোধ করেন, তাঁদের কৃষি ঋণের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ ভর্তুকি কেন্দ্র বহন করে। এছাড়াও কৃষি ঋণের ক্ষেত্রে অনেক রাজ্য তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে ভর্তুকি দেয়। কৃষকদের স্বল্প সুদের হারে ঋণ জোগাতে কেন্দ্র প্রশাসনিক খরব (০.২ শতাংশ) ও নাবার্ডকে সুদ ভর্তুকি বহন করে।
সুদে ভর্তুকির ক্ষেত্রে কেন্দ্র বরাদ্দ গত অর্থবর্ষের ১৭,৮৬৩.৪৩ কোটি থেকে বাড়িয়ে ২০২১ অর্থবর্ষে করেছে ২১,১৭৫ কোটি টাকা।
সীতারামন তাঁর বাজেট বক্তৃতায় চলতি অর্থবর্ষে ১৫ লক্ষ কোটি কৃষি ক্ষণের লক্ষ্যের ঘোষণা করেছিলেন। ২০২০ অর্থবর্ষে এর পরিমাণ ছিল ১৩.৬ লক্ষ কোটি।
নাবার্ডের ২০১৬-১৭-র  সমীক্ষা অনুসারে প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের ভাগ প্রায় ৭২ শতাংশ।
মন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, গত মাসে ঋণ শোধে স্থগিতের ঘোষণার সুবিধা গ্রহণ করেছেন ৩ কোটি কৃষক। এই স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত ৩১ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে, যা বকেয়া ছিল ১ মার্চ থেকে।
লকডাউন ঘোষণার পর কেন্দ্র ২৫ হাজার টাকার সীমা সহ ২৫ লক্ষ নতুন কেসিসি অনুমোদন করেছেন।
তবে কেন্দ্রের এই ঘোষণায় সন্তুষ্ট নন কৃষক নেতারা। তাঁরা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ঘোষণায় সব্জি, ফল, ফুল, দুধ, পোলট্রি ও মত্স্য উত্পাদনের সঙ্গে যুক্তরা আশাণ্বিত হয়েছিলেন। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর ঘোষণায় তাঁরা আশাহত। কারণ, তাঁদের সরাসরি কোনও আর্থিক সাহায্য এই ঘোষণায় নেই। তাঁরা বলছেন, শষ্য ঋণের ঋণ শোধে স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে, কিন্তু কোনও সময়সীমা ছাড়া কেসিসি-র আওতায় আরও বেশি কৃষকদের নথিভূক্তকরণ নিরর্থক। কিষাণ জাগৃতি মঞ্চের সভাপতি সুধীর পানওয়ার এ কথা বলেছেন।