সুকমা: ছত্তীসগঢ়ের সুকমায় মাওবাদী হানায় শহিদ সিআরপিএফ জওয়ানদের মধ্যে ৩ জন বাঙালি। এঁদের নাম কৃষ্ণ দাস, বিনয়চন্দ্র বর্মন ও অরূপ কর্মকার। কৃষ্ণ দাস ও বিনয়চন্দ্র বর্মন কোচবিহারের বাসিন্দা। আর অরূপ কর্মকারের বাড়ি নদিয়ায়।


খবর পাওয়া গিয়েছে, গতকাল যে ভয়াবহ হামলা ঘটেছে, তাতে নকশাল নেতা হিমদার হাত রয়েছে। আহত জওয়ান শের মহম্মদ জানিয়েছেন, প্রথমে মাওবাদীরা গ্রামবাসীদের পাঠিয়ে খবর নেয়, জওয়ানরা কোথায় রয়েছেন। তারপর শতিনেক মাওবাদী তাঁদের ওপর হামলা চালায়। প্রথমটা হকচকিয়ে গেলেও জবাব দেন জওয়ানরা। তাতে বহু মাওবাদীর মৃত্যু হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

শের মহম্মদ বলেছেন, সংখ্যায় প্রায় দ্বিগুণ হওয়ায় ১৫০ জওয়ানকে সহজেই টার্গেট করতে পারে মাওবাদীরা। তবে জওয়ানরাও লড়াই চালিয়ে যান। তিনি নিজেই ৩-৪জন মাওবাদীর বুকে গুলি করেছেন। গুরুতর আহত উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহরের এই জওয়ানের চিকিৎসা চলছে।



কিন্তু গত দেড় মাসে যেভাবে টহলরত জওয়ানদের ওপর দু-দু’বার মাওবাদী হামলা চলল, তাতে পরিষ্কার, তাদের এতদিনের স্বর্গরাজ্য সুকমায় রাস্তা নির্মাণ মাওবাদীরা ভালভাবে নিচ্ছে না।

ছত্তিশগড়, বিহার, ঝাড়খণ্ড, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, তেলেঙ্গানা, পশ্চিমবঙ্গ ও মধ্যপ্রদেশের ৪৪টি নকশাল অধ্যুষিত এলাকা দিয়ে ৫,৪১২ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তা তৈরিতে সবুজ সংকেত দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।



যেখানে হামলা চলেছে, ঠিক সেই জায়গা থেকে তিন রাজ্যে অন্তর্ঘাতমূলক কার্যকলাপ চালায় মাওবাদীরা। কিন্তু সুকমায় শেষ কয়েক বছর যেভাবে দ্রুত গতিতে রাস্তাঘাট তৈরি হচ্ছে, তা তাদের সবথেকে বড় বিপদ বলে তারা মনে করছে। কারণ রাস্তা তৈরি হলে তৈরি হবে স্কুল, হাসপাতাল, সরকারি নানা প্রতিষ্ঠান, গ্রামবাসীদের কাছে পৌঁছে যাবে পানীয় জল, বিদ্যুতের মত ন্যূনতম সুযোগসুবিধে। যে বৈষম্যের অভিযোগ মাওবাদীদের প্রধান অস্ত্র, তাই অর্থহীন হয়ে যাবে। যেহেতু সিআরপির নজরদারিতে ছত্তিশগড়ে রাস্তা নির্মাণ চলছে, তাই বারবার এই বাহিনীর জওয়ানদের টার্গেট করছে তারা।

সরকারি সূত্রে খবর, তাদের কাছে তথ্য ছিল যে, বুরকাপাল ছাউনি থেকে চিন্তাগুফার পথে যাওয়ার সময় সিআরপির ওপর হামলা হতে পারে। তারপরেও এত বড় ঘটনা ঘটে যাওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে, নিরাপত্তা সংক্রান্ত ব্যবস্থা নিতে কোথাও কোনও গন্ডগোল ছিল কিনা। যেভাবে মাওবাদীদের সদর দফতর বলে গণ্য ওই এলাকায় জওয়ানরা কার্যত হেঁটে গিয়ে ফাঁদে ঢুকে পড়েছেন, তাতে গোয়েন্দা ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।