কোঝিকোড়: কেরলে এখনও পর্যন্ত নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আতঙ্ক এমনই ছড়িয়েছে, সংক্রমণের ভয়ে মৃত ব্যক্তিদের শেষকৃত্য করতেও আসছেন না ঘনিষ্ঠ আত্মীয়রা। এই পরিস্থিতিতে মৃতদের শেষকৃত্যও করলেন কোঝিকোড়ের এক চিকিৎসক। তাঁর নাম আর এস গোপাকুমার। তিনি অন্তত ১২ জনের শেষকৃত্যের ব্যবস্থা করেছেন। এর মধ্যে তিনজনের শেষযাত্রায় সামিলও হন এই চিকিৎসক।


গোপাকুমার জানিয়েছেন, ‘১৭ বছরের একটি ছেলের নিপায় মৃত্যু হয়েছে। তার মায়েরও নিপা হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তাঁকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। তিনি ছেলেকে শেষবার দেখতেও পাননি। ছেলেটির শেষকৃত্য করার জন্য কোনও প্রিয়জন ছিল না। আমি ওর শেষকৃত্য করার জন্য দ্বিতীয়বার ভাবিনি। ওর শেষকৃত্য যাতে পূর্ণ মর্যাদায় হয়, তার জন্য আমি সব হিন্দু রীতি-নীতি পালন করেছি। এটা আমার কর্তব্য ছিল।’

এই চিকিৎসক আরও জানিয়েছেন, ‘নিপায় আক্রান্ত হয়ে মৃত ৫৩ বছর বয়সি এক ব্যক্তির মৃত্যু হওয়ার পর তাঁরা আত্মীয়রা জানান, শেষকৃত্যে যোগ দেবেন না। ফলে আমাকেই সেই দায়িত্ব পালন করতে হয়। তবে এক ১৯ বছরের তরুণীর স্বামীর শেষকৃত্য করতে গিয়ে আমার হৃদয় বেদনায় ভরে গিয়েছিল। ওই তরুণী বিষ খেয়েছিলেন। তাঁকে কর্ণাটক থেকে কোঝিকোড়ের হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পরে জানা যায়, তাঁর শয্যার কাছে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের মধ্যে কয়েকজন নিপা-আক্রান্ত। ওই তরুণীর অবশ্য নিপা ধরা পড়েনি। মুসা নামে ৬১ বছর বয়সি এক ব্যক্তিরও শেষকৃত্য আমাকেই করতে হয়। তাঁর দুই ছেলে ও ভাইয়ের স্ত্রীরও নিপায় মৃত্যু হয়েছে। মনে করা হচ্ছে, পরিবারের অন্যদের থেকেই মুসার দেহে নিপা ভাইরাস সংক্রামিত হয়। ১০ ফুট গভীর গর্ত খুঁড়ে তার উপর পাঁচ কেজি ব্লিচিং পাউডার ছড়িয়ে এয়ার-টাইট প্লাস্টিক ডাবল বডি ব্যাগে মুসার দেহ ভরে কবর দেওয়া হয়েছে।’

গোপাকুমার আরও জানিয়েছেন, তিনি যে ১২ জনের শেষকৃত্যের ব্যবস্থা করেছেন, তাঁদের মধ্যে আটজনের নিপা ধরা পড়েছিল। বাকি চারজনের নিপা হয়েছে বলে সন্দেহ করা হলেও, পরে জানা যায় তাঁরা নিপা-আক্রান্ত ছিলেন না। নিপার ফলে মৃত বাকি ৯ জনের পরিবারের লোকজন শেষকৃত্যে যোগ দেন।