নয়াদিল্লি: ২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর। গোটা দেশের কাছে এক কালো দিন। নিজের সন্তানের ভয়াবহ পরিণতি দেখে সেই রাতে শিউড়ে উঠেছিলেন নির্ভয়ার মা-বাবা। এমন অপরাধ দেখে গোটা দেশের শিরদাঁড়া দিয়ে বয়ে গিয়েছিল ঠাণ্ডা স্রোত। সেই থেকে শুরু হয় লড়াই, যা শেষ হল আজ।


২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর রাম সিংহ সহ অন্য অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়। ২১ ডিসেম্বর দিল্লির আনন্দ বিহার বাস টার্মিনাল থেকে ধরা পড়ে নাবালক অভিযুক্ত। তাদের শাস্তির দাবিতে দেশজুড়ে শুরু হয় প্রতিবাদ-বিক্ষোভ।

এরই মধ্যে ২৬ ডিসেম্বর নির্যাতিতাকে সরকারি উদ্যোগে নিয়ে যাওয়া হয় সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে। কিন্তু, মৃত্যুর পাঞ্জা থেকে তাঁকে বাঁচিয়ে আনা যায়নি। ২৯ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরের হাসপাতালেই তাঁর মৃত্যু হয়। দেশজুড়ে ক্ষোভ বাড়ে।

এরপর ২০১৩ সালের ৩ জানুয়ারি খুন, গণধর্ষণ, অপহরণের অভিযোগে পাঁচ অভিযুক্তর বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করে দিল্লি পুলিশ। ২৮ ফেব্রুয়ারি নাবালক অভিযুক্তর বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড। ১১ মার্চ তিহাড় জেলে আত্মহত্যা করে অভিযুক্ত রাম সিংহ। ৩১ অগাস্ট নাবালক অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড। ১০ সেপ্টেম্বর মুকেশ, বিনয়, অক্ষয় ও পবনকে দোষী সাব্যস্ত করে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট। চারজনকেই মৃত্যুদণ্ড দেন বিচারক।

২০১৪ সালের ১৩ মার্চ দোষীদের ফাঁসির সাজা বহাল রাখে দিল্লি হাইকোর্টও। দোষীরা সুপ্রিম কোর্টে গেলে, ৫ মে ফাঁসির সাজা বহাল রাখে সর্বোচ্চ আদালত। এই অপরাধের ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ বলে মন্তব্য করেন বিচারপতিরা। এই রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়ে ফের সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় দোষীরা। ৯ জুলাই তিন দোষীরই আর্জি খারিজ করে দেয় সর্বোচ্চ আদালত।

২০১৯-এর ফেব্রুয়ারিতে দোষীদের মৃত্যু পরোয়ানা জারির আর্জি জানিয়ে আদালতে যান নির্ভয়ার মা-বাবা। ১০ ডিসেম্বর ফের মৃত্যুদণ্ড পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া অক্ষয়। সেই আর্জির বিরোধিতায় সর্বোচ্চ আদালতে পাল্টা আবেদন জানান নির্ভয়ার মা। ১৮ ডিসেম্বর দোষী সাব্যস্ত হওয়া অক্ষয়ের আর্জি খারিজ করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু এরপরও সুপ্রিম কোর্টে কিউরেটিভ পিটিশন করে এবং রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন জানিয়ে তিনবার ফাঁসি পিছিয়ে দেয় দোষীরা। অবশেষে আজ সকালে তিহাড় জেলে ফাঁসি হল তিন অভিযুক্তর।