পুদুচেরি: গ্রামগুলিতে শৌচাগার তৈরি না হলে এবং যেখানে-সেখানে আবর্জনা ফেলা বন্ধ না হলে বিনামূল্যে চাল দেওয়া হবে না। আজ এমনই ঘোষণা করলেন পুদুচেরির লেফটেন্যান্ট গভর্নর কিরণ বেদী। মান্নাডিপেট গ্রামে যাওয়ার পরেই তিনি ট্যুইট করে এ কথা জানিয়েছেন। চার সপ্তাহের মধ্যে গ্রামবাসীদের প্রকাশ্যে মল-মূত্র ত্যাগ এবং আবর্জনা ফেলা বন্ধ করতে হবে বলেও নির্দেশ দিয়েছেন কিরণ। তিনি বলেছেন, গত দু’বছর ধরে গ্রামগুলির পরিচ্ছন্নতা দেখা যাচ্ছে না। সেই কারণে ক্ষুব্ধ হয়েই এই নির্দেশ দিয়েছেন।


এই নির্দেশের বিরোধিতা করে পুদুচেরির মুখ্যমন্ত্রী ভি নারায়ণস্বামী দাবি করেছেন, ‘এই ঘোষণা শুধু অসাংবিধানিকই নয়, এর মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে, লেফটেন্যান্ট গভর্নর বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন। পুদুচেরির অধিকাংশ গ্রামই পরিচ্ছন্ন। কয়েকটি গ্রামে সমস্যা থাকলেও, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে। প্রশাসক (কিরণ বেদী) তাঁর এই নির্দেশের ফল কী হতে পারে সেটা না জেনেই নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁর কোনও ক্ষমতা না থাকা সত্ত্বেও, মানুষের অধিকার কেড়ে নিতে চাইছেন। কিরণ বেদী যেটা বলেছেন, সেটা জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইনের বিরোধী। দিল্লি, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিসগঢ়ে অপরিচ্ছন্নতা আছে। সেখানেও কি বিনামূল্যে চাল বিলি বন্ধ করে দেওয়া হবে?’

এখন পুদুচেরির মোট নাগরিকের অর্ধেকেরও বেশি মানুষকে বিনামূল্যে চাল দেওয়া হয়। কিন্তু কিরণ বলেছেন, গ্রামগুলিতে প্রকাশ্যে মল-মূত্র ত্যাগ করা হয় না, যেখানে-সেখানে আবর্জনা ও প্লাস্টিক ফেলা হয় না, এই মর্মে চার সপ্তাহের মধ্যে বিধায়ক ও গণবন্টন বিভাগের কমিশনারের শংসাপত্র জমা দিতে হবে। সেটা না দেওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট গ্রামগুলিতে বিনামূল্যে চাল দেওয়া হবে না। এ বিষয়ে অবসরপ্রাপ্ত আমলা এম জি দেবসাহায়ম বলেছেন, ‘রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরও এই নির্দেশ দেওয়ার অধিকার নেই। লেফটেন্যান্ট গভর্নরের তো এই ক্ষমতা নেই-ই। তিনি ফের এমন কিছু ক্ষমতা প্রয়োগ করতে চাইছেন, যেটা তাঁর নেই। দেশের নাগরিক হিসেবে সবারই খাদ্যের অধিকার আছে। এটা জন্মগত অধিকার। তাই এই নির্দেশ হাস্যকর।’

দেবসাহায়ম আরও বলেছেন, সংবিধানের ২১ নম্বর ধারায় জীবনের অধিকারের কথা বলা হয়েছে। তাই এই নির্দেশ শুধু অবাস্তবই নয়, সংবিধানের বিরোধী। তাছাড়া সংবিধানের ৪৭ ধারায় বলা হয়েছে, পুষ্টির মান, জীবনযাপনের মানের উন্নতি এবং জনস্বাস্থ্যের মানের উন্নতির জন্য ব্যবস্থা করা রাজ্য সরকারগুলির প্রাথমিক কর্তব্য। সেটারও বিরোধী কিরণের এই নির্দেশ।