নয়াদিল্লি: জয়েন্ট এন্ট্রান্স গুজরাতিতে হলেও কেন বাংলায় নয়-- এই বিতর্কে এবার মুখ খুলল কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের অধীনস্থ পরীক্ষা নিয়ামক সংস্থা ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি (এনটিএ) বা জাতীয় পরীক্ষা পর্ষদ। বৃহস্পতিবার এই সংস্থার তরফে জানিয়ে দেওয়া হল, গুজরাত ছাড়া আর কোনও রাজ্যই নিজ আঞ্চলিক ভাষায় লিখিত পরীক্ষা করানোর জন্য আবেদন জানায়নি।
এদিন এনটিএ-র তরফে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে বলা হয়, ২০১৩ সালে জয়েন্ট এন্ট্রান্স (মেন) পরীক্ষা চালু হয়। লক্ষ্য ছিল, দেশব্যাপী সমস্ত ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তির জন্য এই পরীক্ষাই প্রবেশিকা হিসেবে ধার্য হবে। এই মর্মে সবকটি রাজ্যকে চিঠি পাঠানো হয়েছিল।
এনটিএ জানিয়েছে, একমাত্র গুজরাত সেই শর্তে রাজি হয়। তারা অনুরোধ করেছিল, পত্রের লেখার মাধ্যমের বিকল্পে যেন গুজরাতিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ২০১৪ সালে একইভাবে এই পরীক্ষাকে ইঞ্জিনিয়ারিং প্রবেশিকা হিসেবে মান্যতা দেয় মহারাষ্ট্রও। তারাও অনুরোধ করেছিল, লিখিত মাধ্যম হিসেবে যেন মরাঠি ও উর্দুকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
এনটিএ জানায়, কিন্তু ২০১৬ সালে দুই রাজ্যই মান্যতা প্রত্যাহার করে নেয়। কিন্তু, গুজরাত পরে নিজ-ভাষাকে অন্তর্ভুক্ত রাখার অমনুরোধ জানায়। ফলে, মরাঠি ও উর্দু ভাষাকে বাদ দেওয়া হলেও, রেখে দেওয়া হয় গুজরাতিকে। পরবর্তীকালে, অন্য কোনও রাজ্য থেকে স্থানীয় ভাষায় পরীক্ষা দেওয়ার আর্জি জানানো হয়নি।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি এনটিএ ঘোষণা করে ২০২০ সালের জয়েন্ট এন্ট্রান্স (মেন) পরীক্ষা ইংরেজি, হিন্দি ও গুজরাতি ভাষায় নেওয়া হবে। এরপরই, কেন্দ্রীয় সংস্থার এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গুজরাতি ভাষা থাকলেও কেন্দ্রীয় জয়েন্টে কেন নেই বাংলা ভাষা? প্রশ্ন তুলে কেন্দ্রের সমালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। টুইটারে তিনি লেখেন--ভারত বহু ধর্ম, সংস্কৃতি, ভাষা ও জাতিগোষ্ঠীর দেশ। সমস্ত ধর্ম ও আঞ্চলিক ভাষার অমর্যাদা করাই কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশ্য। এতদিন জয়েন্ট এন্ট্রান্স ইংরেজি এবং হিন্দি ভাষায় হত। এবার কেবলমাত্র গুজরাতি ভাষা যোগ করা হয়েছে। এই ধরনের পদক্ষেপ প্রশংসনীয় নয়। আমি গুজরাতি ভাষা ভালবাসি। কিন্তু কেন অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষাকে উপেক্ষা করা হল? কেন তাদের সঙ্গে সুবিচার হল না? যদি গুজরাতি ভাষাকে রাখা হয় তবে বাংলা-সহ সমস্ত আঞ্চলিক ভাষারও থাকা উচিত। এই ইস্যু নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা না হলে সর্বত্র প্রতিবাদ হবে। এই অবিচারের জন্য আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলা মানুষদের ভাবাবেগে আঘাত লেগেছে।

















বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার রাতে ট্যুইটে সরব হন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি লেখেন, সংবিধান সকলকে সমান অধিকার দিয়েছে। তাহলে কেন শুধু ইংরেজি, হিন্দি ও গুজরাতি? ২০২০ সালের কেন্দ্রীয় জয়েন্ট পরীক্ষায় বাংলা, ওড়িয়া, কন্নড়, তেলুগু, তামিল, মারাঠি সব আঞ্চলিক ভাষাকেই যুক্ত করতে হবে। ভাষার ভিত্তিতে ভেদাভেদ অসাংবিধানিক।





বাংলা ভাষাকে যুক্ত করার দাবিতে বুধবার এনটিএকে চিঠি দেয় রাজ্যের শিক্ষা দফতর। রাজ্যের শিক্ষাসচিবের পাঠানো সেই চিঠির প্রতিলিপি পাঠানো হয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকেও। তৃণমূলের পাশে দাঁড়িয়ে বাংলা ভাষাকে যুক্ত করার দাবি জানায় রাজ্য বিজেপিও।