নয়াদিল্লিনোট-বাতিল ইস্যুতে এবার তরজায় জড়াল তৃণমূল-বিজেপি। এই সিদ্ধান্তে হাওলা-কারবারীরা বিপদে পড়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন সরব হচ্ছেন? খোঁচা অমিত শাহর। মানুষের সমস্যা বোঝে না বিজেপি। পাল্টা মন্তব্য তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনের।


মাত্র চার ঘণ্টার নোটিসে পাঁচশো ও হাজার টাকার নোট বাতিলের পর থেকেই মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সরব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রেক্ষিতে এবার তৃণমূলনেত্রীকে বিঁধতে আসরে নামলেন অমিত শাহ। বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতির প্রশ্ন, নয়া নোটের বিরুদ্ধে কেন সরব মমতা?


এরপরই ঘুরিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে বলেন, এই সিদ্ধান্তে তো হাওয়ালা কারবারিদের অসুবিধা। সরকারের এই সিদ্ধান্ত সন্ত্রাসবাদী, নকশাল এবং জালনোট ও হাওয়ালা কারবারীদের কাছে বড় ধাক্কা। সাংবাদিক সম্মেলনে এসে অমিত শাহ বলেন, যাদের কালো টাকা রয়েছে, নোট বাতিলের সিদ্ধান্তে তারা বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছে।


এদিন বিজেপি সভাপতির তোপের মুখে পড়েন কংগ্রেস, সপা, বসপা-ও। বিষ্ময় প্রকাশ করে অমিত জানান, তিনি বুঝতে পারছেন না কেন রাহুল গাঁধী এবং মায়াবতী সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন। এরপর, কটাক্ষের সুরে নিজেই উত্তর দেন অমিত শাহ। বলেন, সম্ভবত সরকারের এই সিদ্ধান্ত কিছু দল গরিব হয়ে গিয়েছে। তিনি যোগ করেন, সাধারণ মানুষের চিন্তার কোনও কারণ নেই।


নোট বাতিল করার জন্য বিরোধীদের ক্রমাগত আক্রমণের মুখে কেন্দ্র। এই পরিস্থিতিতে সরকারের হয়ে ব্যাট ধরল বিজেপি। এদিন অমিত শাহ জানান, কেন্দ্রের নোট বাতিলের সিদ্ধান্তে অনেক রাজনৈতিক দল রাতারাতি গরিব হয়ে পড়েছে।


তিনি জানান, মোদী সরকারের এই সিদ্ধান্তে দেশবাসী সঙ্গে রয়েছে। যাঁরা সততার সঙ্গে নিজ নিজ কর প্রদান করে থাকেন, তাঁরা খুশি। অমিত শাহের মতে, দেশে কালো টাকার বাড়বাড়ন্ত রুখতে এই পদক্ষেপ প্রয়োজন ছিল।


প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অবিলম্বে পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের ঘোষণা করেন। এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে কেন্দ্রকে তীব্র আক্রমণ করেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী, বহুজন সমাজ পার্টি প্রধান মায়াবতী, সমাজবাদী পার্টি প্রধান মুলায়ম সিংহ যাদব, দিল্লির মু্খ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।


নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের পরই একে আর্থিক জরুরি অবস্থা আখ্যা দেন মমতা। বৃহস্পতিবার ফের তিনি ট্যুইট করেন, গোটা দেশে আর্থিক অরাজকতা চলছে। কালো টাকা ধরুক আপত্তি নেই। কিন্তু, ধোপা, নাপিত, গ্রামের মানুষ, তাঁদের কাছে খুচরো নেই। দু’হাজার টাকার বেশি পাবে না কেন? বেসরকারি হাসপাতালগুলি পুরনো টাকা নেবে না কেন?


গ্রাম বাংলার গরিব মানুষ, মধ্যবিত্তদের গায়ে আঁচ পড়েছে। লক্ষ্মীর ঝাঁপিও কি কালো টাকা? সুবিধা হল কাদের? এক শ্রেণির মানুষের। যাঁদের ক্রেডিট কার্ড আছে। যাঁদের সারাদিন ধরে না খেয়ে, লাইন দিয়ে টাকা তুলতে হচ্ছে, তাঁদের কথাটা ভাবুন।


এমনকী, জাপান সফরে যাওয়া প্রধানমন্ত্রীকেও তিনি কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। ট্যুইটারে তিনি লেখেন, যাঁদের সারাদিন ধরে না খেয়ে, লাইন দিয়ে টাকা তুলতে হচ্ছে, তাঁদের কথাটা ভাবুন। আস্তে আস্তে এরা ভিখিরি হবে। নতুন নোট তৈরি করতে কম খরচ হল? সংসদে প্রশ্ন উঠবে। রাজ্যে ব্যাঙ্ক নেই, ব্যাঙ্কে লোক নেই। পোস্ট অফিসগুলি তো সাইন বোর্ড। এ সব করে তিনি চলে গেলেন জাপান। কালো টাকা বিদেশ থেকে এনে ১৫ লক্ষ করে প্রত্যেককে দেবেন বলেছিলেন। কোথায় সেই টাকা?


 অমিত শাহকে পাল্টা দিয়েছেন ডেরেক ও ব্রায়েন। তৃণমূল সাংসদের মন্তব্য, সাধারণ মানুষের সমস্যার কথা জানা নেই বলেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।