একদিকে ব্রহ্মোস মিসাইলকে আরও উন্নত ও ক্ষিপ্র করার গবেষণা চালাচ্ছে ভারত ও রাশিয়া। অন্যদিকে এই সুপারসনিক (শব্দের চেয়ে দ্রুত) মিসাইলের এয়ার-ভার্সানের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনা।
সূত্রের খবর, আগামী ডিসেম্বরে ভারতীয় বায়ুসেনার প্রধান ভরসা সুখোই-৩০ এমকেআই বিমান থেকে একটি ব্রহ্মোস মিসাইলকে নিক্ষেপ করা হবে। জানা গিয়েছে, মিসাইলটির টার্গেট হিসেবে ব্যবহার করা হবে একটি ডি-কমিশনড(অবসৃত) রণতরীকে।
এই প্রথম ব্রহ্মোস-কে কোনও বিমান থেকে নিক্ষেপ করা হবে। এর আগে মিসাইলের ল্যান্ড-লঞ্চ (ভূমি থেকে উৎক্ষেপণ), সি-লঞ্চ (জাহাজ থেকে উৎক্ষেপণ) এবং আন্ডারওয়াটার লঞ্চ (সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণ) সাফল্যের সঙ্গে করা হয়েছে। বাকি ছিল এয়ার-লঞ্চটাই।
ব্রহ্মোস এরোস্পেস-এর এক কর্তা জানান, ব্রহ্মোসকে বিমান থেকে নিক্ষেপ করাটা এতটাও সহজ নয়। তিনি মনে করিয়ে দেন, বিশ্বে আর কোথাও এত ভারি মিসাইলকে বিমান থেকে নিক্ষেপ করা হয় না। অনেক বিষয়ের ওপর নজর রাখতে হয়।
তিনি জানান, বর্তমানে, সুখোই বিমানে মিসাইল লাগিয়ে লাগাতার সর্টি (উড়ান) অনুশীলন করছেন পাইলটরা। লক্ষ্য একটাই, মিসাইলের ভারের সঙ্গে বিমানকে অভ্যস্ত করা। একবার তা হলে ডিসেম্বরে প্রথমবার মিসাইলকে নিক্ষেপ করা হবে।
ওই কর্তা জানান, পরীক্ষা সফল হলে, ভারতীয় বায়ুসেনার ক্ষমতা ও সক্ষমতা বহুগুণ বেড়ে যাবে। এক কথায়, বিশ্বের আর কোনও বায়ুসেনার এত ক্ষমতা থাকবে না। তিনি যোগ করেন, আকাশ থেকে এই অত্যন্ত দ্রুতগতির ক্রুজ মিসাইলকে নিক্ষেপ করে শত্রুর যে কোনও জায়গা নিমেষে গুঁড়িয়ে দিতে পারবে ভারত। ব্রহ্মোসের সঙ্গে পাল্লা দেবে, এমন কোনও মিসাইল নেই কারও কাছে। কারণ, এটিই এই মুহূর্তে বিশ্বের দ্রুততম ক্রুজ মিসাইল।
ভিডিওতে দেখুন ব্রহ্মোসের পরীক্ষার কিছু মুহূর্ত
[embed]
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ব্রহ্মোসের ফলে, ভারতকে বেশ সমীহ করতে শুরু করেছে চিন। অন্যদিকে, পাকিস্তান রীতিমত চিন্তিত। কারণ, এই মিসাইল লক্ষ্যভেদে অব্যর্থ যে, ডিশ অ্যান্টেনার মত ছোট্ট জিনিসকেও নিশানা করতে ভুল করে না। ফলে, নিজেদের সামরিক ঘাঁটি নিয়ে আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র।
ব্রহ্মোসের বর্তমান প্রজন্ম শব্দের চেয়ে প্রায় তিনগুণ (মাক ২.৮) গতিতে ছোটে। ভূপৃষ্ঠের ওপর ১০ মিটার থেকে ১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত চলতে পারে মিসাইলটি। এর সর্বোচ্চ পাল্লা ৩০০ কিলোমিটার।
ইতিমধ্যেই ব্রহ্মোসকে স্থলসেনা ও নৌসেনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এবার আকাশ-পরীক্ষায় পাশ করলে তা বায়ুসেনাতেও অন্তর্ভুক্ত হবে। ব্রহ্মোসের রেঞ্জ (পাল্লা) এবং গতিকে আরও বৃদ্ধি করতে গবেষণা চালাচ্ছে ভারত ও রাশিয়া।
ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ গোষ্ঠী (এমটিসিআর)-এর সদস্য না হওয়ায় এতদিন ভারত এই পাল্লা বাড়ানোর অনুমোদন পায়নি। কিন্তু, এখন আর সেই বাধা নেই। ওই কর্তা যেমন জানালেন, এরপর যুদ্ধ লাগলে ব্রহ্মোসের জন্য গোটা পটচিত্রটাই পাল্টে যাবে।