নয়াদিল্লি: সামরিক ক্ষেত্রে ভারতের একের পর এক অগ্রগতি নিয়ে চিন্তিত প্রতিবেশী পাকিস্তান।

সম্প্রতি, ক্ষেপণাস্ত্র-বিধ্বংসী মিসাইলের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে দেশের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা (ডিআরডিও)। এই প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে পাকিস্তানের বিদেশ বিষয়ক উপদেষ্টা সরতাজ আজিজ জানান, ক্ষেপণাস্ত্র-বিধ্বংসী মিসাইল নিয়ে ভারত নিরাপত্তার ঢাকঢোল পেটাতে পারে, কিন্তু তাতে ওই অঞ্চলে অহেতুক জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে।

গত ১৫ মে, ওড়িশার বালাসোর থেকে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরী সুপারসনিক ইন্টারসেপ্টর মিসাইলের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করে ভারত। এই মিসাইলের বৈশিষ্ট্য হল, তা ভারতের মাটিতে আছড়ে পড়ার আগে যে কোনও শত্রুদেশের ক্ষেপণাস্ত্রকে মাঝ-আকাশেই ধ্বংস করে দিতে সক্ষম।

সূত্রের খবর, ভারতের এই পরীক্ষার জেরে মঙ্গলবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পাক সেনেট। বিরোধীদের আক্রমণের মুখে পড়তে হয় নওয়াজ শরিফ সরকারকে। পাক সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, সরকারি জবাবে আজিজ বলেন, ভারত একদিকে শান্তিপূর্ণ প্রতিবেশীর কথা বলছে, অন্যদিকে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালাচ্ছে।

বিরোধীদের ক্ষোভ প্রশমিত করতে আজিজ জানান, ভারতের এই মিসাইল পরীক্ষা ভারতীয় মহাসাগর অঞ্চলে পরমাণু-যুদ্ধের পরিবেশ সৃষ্টি করছে। তাঁর দাবি, নয়াদিল্লির এই পদক্ষেপ গোটা অঞ্চলে অহেতুক জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে। তিনি আশ্বাস দেন, নিজেদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পাক সবরকম চেষ্টা করবে।

কিন্তু, আজিজের এই আশ্বাসে কতটা চিড়ে ভিজেছে তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। কারণ, পাক সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, বিরোধী দলগুলি এখন থেকেই পাক এই পরিস্থিতির জন্য কূটনীতির ব্যর্থতাকেই দায়ী করছে।

তাদের দাবি, একদিকে যেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মিসাইল টেকনোলজি কন্ট্রোল রেজিম (এমটিসিআর) এবং নিউক্লিয়ার সাপ্লায়ার্স গ্রুপ (এনএসজি)-তে ঢোকার দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছে, সেখানে পাকিস্তান ক্রমশ প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে।

পাকিস্তান মুসলিম লিগ কয়েদ-এ-আজম (পিএমএল-কিউ) সাংসদ মুশাহিদ হুসেন সঈদ জানান, সোলে আসন্ন এনএসজি-র সম্মেলনে ভারতের অন্তর্ভুক্তির জমি প্রায় তৈরি। তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের কূটনৈতিক ব্যর্থতা। ভারতীয়রা আমাদের চারদিকে থেকে ঘিরে ধরেছে। এমনকী, আমাদের প্রতিবেশি আফগানিস্তান ও ইরানও ভারতের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। কারণ, আমাদের দুর্বল বিদেশ-নীতি।’

আবার পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) সাংসদ ফারহাতুল্লা বাবর বিদেশ নীতির ব্যর্থতার পিছনে দেশের প্রতিরক্ষা নীতিকেই দায়ী করেন। তিনি বলেন, প্রতিরক্ষাকে শক্তিশালী করতে গিয়ে নন-স্টেট অ্যাক্টরদের পুষতে হয়েছে। এখন তার ফল ভুগতে হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, পাকিস্তানকে অত্যাধুনিক এফ-১৬ যুদ্ধবিমান বিক্রি করতে উদ্যত হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু, ভারত তীব্র আপত্তি তোলে। আপত্তি ওঠে মার্কিন সেনেটেও। ফলে, ওয়াশিংটন জানিয়ে দেয়, পুরো টাকা একলপ্তে মেটালে তবেই পাকিস্তান ওই যুদ্ধবিমান পাবে (যা পাকিস্তানের পক্ষে কোনওমতেই সম্ভব নয়)।

পাকিস্তানের ধারণা, ভারত কলকাঠি নেড়ে এই চুক্তি বাতিল করিয়েছে।