নয়াদিল্লি: পঠানকোটের বায়ুসেনা ঘাঁটিতে জঙ্গি হামলা রুখতে না পারার জন্য কেন্দ্রের ব্যর্থতাকেই দায়ী করল সংসদের স্থায়ী কমিটি। তাদের মতে, দেশের সন্ত্রাস-দমন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চূড়ান্ত গাফিলতি রয়েছে। পাশাপাশি, ঘাঁটির সার্বিক নিরাপত্তা-চিত্র নিয়েও উষ্মা প্রকাশ করে কমিটি।


সম্প্রতি, দেশের সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে ১৯৭ তম রিপোর্ট পেশ করেছে স্বরাষ্ট্র বিষয়ক সংসদের স্থায়ী কমিটি। সেখানে গত ২ জানুয়ারিতে হওয়া পঠানকোট হামলাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। রিপোর্টে হামলার নেপথ্যে পঞ্জাব পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বলা হয়েছে, এই ঘটনায় পঞ্জাব পুলিশের ভূমিকা অত্যন্ত সন্দেহজনক এবং তা বহু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

রিপোর্টে কমিটির সদস্যরা বলেন, তাঁরা বুঝতে পারছেন না, জঙ্গি-হামলার আশঙ্কার কথা বহু আগে জানা সত্ত্বেও কেন এই হামলা রোখা সম্ভব হয়নি। আশঙ্কা সত্ত্বেও কী করে জঙ্গিরা উচ্চ-সুরক্ষিত বায়ুসেনা ঘাঁটিতে ঢুকল এবং এত বড় হামলা চালাল। কমিটি জানিয়েছে, জঙ্গি ও তাদের হ্যান্ডলারদের মধ্যে হওয়া কথোপকথনের ইন্টারসেপ্ট এবং পঠানকোটের পুলিশ সুপার ও তাঁর বন্ধুর অপহরণকাণ্ডের পর মেলা নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দারা আগেই জানতে পেরেছিলেন যে হামলাকারীরা কোনও প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠানে আক্রমণ করার ছক কষেছে। তা সত্ত্বেও, জঙ্গি-হামলার মোকাবিলা করতে কোনওপ্রকার আগাম প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি। নিরাপত্তা-বাহিনী নির্বিকার-চিত্তে ছিল। এটাই সবচেয়ে অবাক করেছে বলে মনে করেছে কমিটি।

এর থেকেই কমিটি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, দেশের সন্ত্রাস দমন প্রতিষ্ঠানগুলিতে নিরাপত্তা নিয়ে চূড়ান্ত কিছু সমস্যা রয়েছে। কমিটি আরও জানিয়েছে, হামলার পর ঘাঁটি পরিদর্শন করে তারা দেখেছে যে, ভিতরে সীমান্ত প্রাচীর বরাবর কোনও রাস্তা নেই। ফলে, নজরদারি করা সম্ভব নয়। উপরন্তু, সীমান্তের ধারে বড় বড় ঝাড় ও জঙ্গল হয়ে রয়েছে। যার জেরে জঙ্গিরা সেখানে একটি গোটা দিন প্রায় লুকিয়ে থাকা সত্ত্বেও কারও নজরে পড়েনি। সবমিলিয়ে, বায়ুসেনা ঘাঁটির সার্বিক নিরাপত্তার মান অত্যন্ত খারাপ।

একইসঙ্গে, কমিটি এ-ও স্বীকার করেছে, এই হামলার সঙ্গে পাকিস্তান ওতপ্রোতভাবে জড়িত। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, যে ভাবে পাকিস্তান থেকে এদেশে জঙ্গিরা এসেছে, তার থেকেই পরিষ্কার যে পাক নিরাপত্তা বাহিনী ও সেদেশের গোয়েন্দারা এর নেপথ্যে রয়েছে। না হলে, সীমান্তের ওপারে পাকিস্তানের শক্তিশালী নজরদারি ব্যবস্থা এড়িয়ে চারজন সশস্ত্র জঙ্গি এদেশে অনুপ্রবেশ করতে পারে না। এছাড়া, জঙ্গিরা যে অস্ত্র ব্যবহার করেছিল, সেগুলি পাকিস্তানে তৈরি হওয়ার প্রমাণ মিলেছে। তাই পাক-যোগের তত্ত্ব অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই।

প্রসঙ্গত, গত ২ জানুয়ারিতে চার জয়েশ-ই মহম্মদ জঙ্গি পঠানকোট বায়ুসেনা ঘাঁটিতে হামলা চালালে সাত নিরাপত্তারক্ষীর মৃত্যু হয়।