নয়াদিল্লি: দীর্ঘ সময় রাজ্যসভা, কখনও আবার লোকসভা। এই সংসদের সঙ্গে তাঁর জীবন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আর সেই সংসদই যখন তাঁকে বিদায়ী সম্বর্ধনা জানাল, তখন আবেগপ্রবণ হয়ে উঠলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। একদা ইন্দিরা গাঁধী মন্ত্রিসভার নম্বর টু বিদায়বেলায় তাঁর মেন্টর সম্পর্কে ভূয়সী প্রশংসা করলেন।


এদিন প্রণব বলেন, ‘আমার জীবনের ৩৭টা বছর আমি কাটিয়ে দিয়েছি এক জন সাংসদ হিসেবে। যখন আমার বয়স মাত্র ৩৪ বছর, তখন আমি সুযোগ পেয়েছিলাম পোড় খাওয়া রাজনীতিকদের সঙ্গে এই দেশের সেবা করার।’ ইন্দিরা জমানার খুঁটিনাটি যাঁর নখদর্পণে, সেই প্রণবের মুখে উঠে এল প্রয়াত প্রধানমন্ত্রীর গল্পও।

প্রণব মানেই সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে চলার মানুষ। ঐকমত্যের রাজনীতিতে বিশ্বাসী বাঙালি ব্রাহ্মণ সন্তানের স্মৃতিচারণায় তাই উঠে এল তাঁর রাজনৈতিক জীবনে দেখা বিরোধী হেভিওয়েটদের কথাও। বললেন, ‘কোনও কখনও আমি আডবাণীজির পরামর্শও মেনে চলেছি এবং সনিয়াজির কাছ থেকে নিঃশর্ত সমর্থন পেয়েছি। মনমোহন সিংহও আমাকে সাহায্য করেছেন। ইন্দিরাজি ছাড়া আমি যাঁদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছি, তাঁরা হলেন বাজপেয়ী ও নরসিমা রাও।’

মোদী জমানায় যে ভাবে জিএসটি বিল পাশ হয়েছে, রবিবার তার প্রশংসা যেমন শোনা গিয়েছে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মুখে, তেমনই মোদী সরকার মাঝেমধ্যেই যেভাবে অর্ডিন্যান্স জারি করতে অভ্যস্ত, তা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। সরকার এবং বিরোধী, দু’পক্ষেই পরামর্শ দিয়েছেন ৮১ বছরের প্রবীণ রাজনীতিবিদ। বলেছেন, ‘সংসদ হল বিতর্ক এবং আলোচনার জায়গা। সংসদে অচলাবস্থায় বিরোধীদেরই বেশি ক্ষতি হয়।’

এ প্রসঙ্গেই বলতে গিয়ে প্রণব হেঁটেছেন স্মৃতির সরণি বেয়ে। তাঁর আমলে সংসদে যে বাগ্মীদের তিনি দেখেছেন, একে একে তাঁদের নাম উঠে এসেছে বিদায়ী রাষ্ট্রপতির মুখে। সংসদের ঐতিহাসিক সেন্ট্রাল হলে দাঁড়িয়ে বক্তৃতার শুরুতেই বলেছিলেন, তিনি এই সংসদেরই সৃষ্টি। আর রাষ্ট্রপতি হিসাবে রবিবারই শেষবার গণতন্ত্রের এই মন্দির ছাড়লেন প্রণব মুখোপাধ্যায়।