নয়াদিল্লি: খাদিতে নেই ‘বাপু’!


সম্প্রতি, খাদি গ্রামোদ্যোগ পর্ষদ (কেভিআইসি) ২০১৭ সালের ক্যালেন্ডার ও ডায়েরি প্রকাশ করেছে। কিন্তু, সেখানে জায়গা পাননি মহাত্মা গাঁধী। সেই জায়গায় রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ছবি!


যখন থেকে খাদি গ্রামোদ্যোগ পর্ষদের জন্ম হয়েছে, তখন থেকেই খাদির যে কোনও প্রচারে মহাত্মা গাঁধীর ছবিই যেত। বহু প্রজন্ম সেই ছবি দেখেই অভ্যস্ত। চিরাচরিত ধুতি পরিহিত মহাত্মার ওই চরকা চালানোর ছবি বহুল-প্রচলিত। এক কথায়, খাদির সঙ্গে মহাত্মা গাঁধী ওতপ্রোতভাবে জড়িত।


কিন্তু, এখন খাদির নতুন ক্যালেন্ডার ও ডায়েরির প্রচ্ছদে চরকা থাকলেও উধাও গাঁধীজি। বদলে, সেখানে গাঁধীর মতো স্টাইলে চরকার সামনে বসে প্রধানমন্ত্রী। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, মোদী নিজের ট্রেডমার্ক কুর্তা-পাজামা-কোট পরে চরকা চালাচ্ছেন। বদল হয়েছে চরকার ডিজাইনেও। পুরনোর বদলে বসেছে নতুন স্টাইলিশ চরকা।


নতুন ছবি দেখে বিস্মিত সকলেই। অনেকে বিষয়টিকে ভালভাবে নেননি। যেমন পর্ষদের বহু কর্মীই এতে ক্ষুব্ধ। গোটা ঘটনায় তাঁরা কার্যত বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। এই বদলের বিরুদ্ধে তাঁরা বৃহস্পতিবার মধ্যাহ্নভোজনের সময় মুখে কালো কাপড় বেঁধে নীরব প্রতিবাদ জানান।


এক কর্মী ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, খাদিকে গরিব জনমানসের জন্য তৈরি করেছিলেন গাঁধীজি। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়ে খাদিকে তিনি স্বদেশী ও আত্ম-নির্ভরতার একটি প্রতীক করে তুলেছিলেন। কিন্তু, এই বছর সেই সব ভাবাবেগ ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গেল।


এই প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে পর্ষদের চেয়ারম্যান বিনয় কুমার সাক্সেনা অবশ্য গোটা ঘটনাকে লঘু করার চেষ্টা করেন। বলেন, খাদির সৃষ্টিই হয়েছে মহাত্মার আদর্শের ওপর ভিত্তি করেই। মহাত্মা হলেন খাদির আত্মা। তাঁকে অস্বীকার করার কোনও প্রশ্নই নেই।


যদিও, তিনি একইসুরে বদল নিয়ে দাবি করেন, এরকম ঘটনা আগেও ঘটেছে। এদিন তিনি এই বদলের স্বপক্ষেই সওয়াল করেন। মোদীকে খাদির সবচেয়ে বড় ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হিসেবে উল্লেখ করে তাঁর দাবি, তাঁর লক্ষ্যের সঙ্গে কেভিআইসি-র ভাবনার অনেক মিল।


তিনি বলেন, গ্রামগুলিকে স্বনির্ভরের মাধ্যমে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’, গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারীদের মধ্যে কর্মসংস্থান বাড়িয়ে দক্ষতা উন্নয়ন এবং বাণিজ্যিকরণ, উদ্ভাবন এবং খাদি তৈরিতে নতুন আধুনিক প্রযুক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করাই এই পর্ষদের লক্ষ্য। যা মোদীও চান। এছাড়া, মোদী হলেন যুবসমাজের আইকন।


এমনিতে, গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীনই খাদির বস্ত্র ব্যবহার করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তাঁর ব্যবহার করা হাফ-হাতা-ঢিলেঢালা কুর্তা এখন বাজারে ‘মোদী-কুর্তা’ নামে পরিচিত। এমনকী, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তেও বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে এই মোদী-কুর্তা।