করোনা পরিস্থিতির পর্যালোচনা; ভোট পরিচালনার ধাঁচেই গোটা দেশে ভ্যাকসিন বন্টন, প্রস্তাব মোদির
ওয়েব ডেস্ক, এবিপি আনন্দ | 17 Oct 2020 10:28 PM (IST)
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দেশে সফলভাবে বিপর্যয় মোকাবিলা ও নির্বাচন পরিচালনার অভিজ্ঞতা এক্ষেত্রে কাজে লাগাতে হবে। কোল্ড স্টোরেজ চেন, বন্টন নেটওয়ার্ক, নজরদারির ব্যবস্থা, পর্যালোচনা ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতির আগাম পরিকল্পনা তৈরির করে রাখার ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেছেন প্রধামনন্ত্রী।
নয়াদিল্লি: দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৭৪ লক্ষ পেরিয়ে গেছে!ইতিমধ্যে মৃত্যু হয়েছে প্রায় ১ লক্ষ ১৩ হাজার মানুষের।দেশজুড়ে উত্সাবের মরসুমে চোখ রাঙাচ্ছে করোনার সংক্রমণ! কিন্তু, ভ্যাকসিন কবে আসবে, কেউ জানে না! এই পরিস্থিতিতে দেশের ভৌগলিক বিস্তার ও বৈচিত্র অনুযায়ী ভ্যাকসিন মজুত ও বন্টনের ওপর জোর দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শনিবার দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে কোভিড ভ্যাকসিন সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী, নীতি আয়োগের স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রতিনিধি এবং একাধিক শীর্ষ আমলা। সূত্রের খবর, সেখানে দেশের করোনা সংক্রমণের সর্বশেষ পরিস্থিতির আপডেট দেওয়া হয় প্রধানমন্ত্রীকে। প্রধানমন্ত্রীর দফতর সূত্রে দাবি, এই মুহূর্তে দেশে তিনটি করোনা ভ্যাকসিনের হিউম্যান ট্রায়াল চলছে। যার দুটি ফেজ টু এবং একটি ফেজ থ্রি পর্যায়ে রয়েছে। এর মধ্যে কোনও একটি ভ্যাকসিন চূড়ান্ত সাফল্য পেলে তা সঠিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণ, বাজারে চলে এলে তার যথাযথ সংরক্ষণ এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বণ্টনের রূপরেখা নির্ধারণের বিষয়েও এ দিনের বৈঠকে আলোচনা হয়। সূত্রের খবর, এই বিষয়ে বিভিন্ন রাজ্য, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ও সংশ্লিষ্ট পক্ষকে নিয়ে বৈঠকের পর ইতিমধ্যে একটি ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করেছে ভ্যাকসিন সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কমিটি। শনিবার তা ব্যাখ্যা করা হয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে। এরপরই ভ্যাকসিন হাতে এলে তা যাতে দ্রুত দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দেওয়া যায় তার ওপর জোর দেওয়ার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে গত ১৫ অগাস্ট রাহুল গান্ধী ট্যুইট করে বলেছিলেন, ‘‘যে সমস্ত দেশ কোভিডের টিকা তৈরি করবে, ভারত তাদের অন্যতম। তাই টিকা কী ভাবে পাওয়া যাবে, তার একটি স্পষ্ট, ন্যায্য, বৈষম্যহীন ও সার্বিক নীতি প্রয়োজন। সরকারের এখনই এটা করা উচিত, যাতে ওই টিকা মানুষের আয়ত্তের মধ্যে থাকে এবং তার সুলভ বণ্টন নিশ্চিত করা যায়।’’ ২৭ সেপ্টেম্বর সিরাম ইনস্টিটিউটের সিইও আদর পুনাওয়ালা টুইট করে বলেছিলেন,‘‘আগামী এক বছরের জন্য ভারত সরকারের পুঁজিতে ৮০ হাজার কোটি টাকা আছে তো? কারণ দেশের সব মানুষের জন্য টিকা আমদানি এবং বণ্টনে ওই পরিমাণ টাকা লাগতে পারে। এটাই আমাদের সামনে অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘প্রশ্নটা তুললাম, কারণ দেশ ও বিদেশের যে সংস্থাগুলি ভ্যাকসিনের জোগান দেবে, উৎপাদন ও বণ্টন নিয়ে তাদের সঙ্গে পরিকল্পনা করা দরকার।’’ জানা গেছে, এদিনের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরেন যে, দেশে তিনটি ভ্যাকসিন পরীক্ষামূলক পর্বে রয়েছে। এরমধ্যে দুটির দ্বিতীয় পর্যায় ও একটির তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা চলছে। বাংলাদেশ, মায়ানমার, কাতার, ভুটান সহ বিভিন্ন প্রতিবেশী তাদের দেশে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুরোধ জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এক্ষেত্রে সহায়তা পৌঁছে দিতে আমাদের প্রচেষ্টা শুধুমাত্র নিকট প্রতিবেশী দেশগুলির মধ্যেই সীমাবদ্ধ না রেখে ভ্যাকসিন, ওষুধ ও ভ্যাকসিনের সরবরাহ পদ্ধতির জন্য আইটি প্ল্যাটফর্ম যোগানের ক্ষেত্রে সমগ্র বিশ্বের কাছেই পৌঁছে যেতে হবে। ভ্যাকসিন প্রস্তুত হলে প্রত্যেক নাগরিকের কাছে দ্রুত পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করারও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। রসদ, সরবরাহ ও প্রশাসনিক বিষয়গুলি পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে প্রস্তুত রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দেশে সফলভাবে বিপর্যয় মোকাবিলা ও নির্বাচন পরিচালনার অভিজ্ঞতা এক্ষেত্রে কাজে লাগাতে হবে। কোল্ড স্টোরেজ চেন, বন্টন নেটওয়ার্ক, নজরদারির ব্যবস্থা, পর্যালোচনা ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতির আগাম পরিকল্পনা তৈরির করে রাখার ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। নির্বাচন পরিচালনার পদ্ধতির মতো পরিকল্পনা তৈরির ওপর গুরুত্ব আরোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ভ্যাকসিনের সরবরাহের ক্ষেত্রে সমস্ত রাজ্য, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল, নাগরিক সমাজ সংগঠন, স্বেচ্ছাসেবক, নাগরিক ও সংশ্লিষ্ট সমস্ত প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের উৎসাহিত করতে হবে।