নয়াদিল্লি: ১৯৭১-এর যুদ্ধের আগে পর্যন্ত ভারত নিজের বায়ুসেনার শক্তির পূর্ণ সদ্ব্যবহার করেনি বলে অভিমত জানালেন বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল অরূপ রাহা। বৃহস্পতিবার এক সেমিনারে এ প্রসঙ্গে খোলাখুলি নিজের মতামত জানিয়ে তিনি এও বলেছেন যে, ‘নীতি-নৈতিকতা’র ওপর বেশি জোর দেওয়ার বদলে ভারত সামরিক সমাধানের রাস্তায় হাঁটলে এতদিনে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর তার কব্জায় চলে আসত। পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরকে ‘আমাদের শরীরে কাঁটা’ বলে উল্লেখ করে বায়ুসেনা প্রধান এ কথাও বলেন যে, ভারত তার নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রয়োজনের ক্ষেত্রে কোনওদিনই ‘বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি’ দেখায়নি।


ভারতকে ঘিরে নিরাপত্তার বলয়টি বিষিয়ে উঠেছে, এহেন অভিমত জানিয়ে তিনি বলেছেন, উপমহাদেশে সংঘাত মোকাবিলা, শান্তি ও সুস্থিতি বজায় রাখতেও সামরিক শক্তির অংশ হিসাবে বিমান বাহিনীর শক্তি কাজে লাগানো প্রয়োজন হয়ে পড়বে।

বায়ুসেনা প্রধান বলেছেন, আমাদের বিদেশনীতির নির্যাস তৈরি হয়েছে রাষ্ট্রসঙ্ঘের সনদ, বেজোট আন্দোলনের সনদ ও পঞ্চশীল নীতির ভিতের ওপর। আমার মতে, আমরা চিরকাল বড় বড় নীতি-আদর্শ বোধে চালিত হয়েছি। নিজেদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত চাহিদার ব্যাপারে সত্যিই কখনও বাস্তবমুখী মনোভাব নিইনি। সেদিক থেকে দেখলে নিজেদের পক্ষে অনুকূল পরিবেশ বজায় রাখতে সামরিক শক্তির ভূমিকা, গুরুত্বকে উপেক্ষাই করে এসেছি।

তাঁর মতে, অতীতে দেশ একাধিকবার সংঘাতে জড়িয়েছে। কিন্তু সে সময় দ্বন্দ্ব, বিরোধের মোকাবিলা করে প্রতিদ্বন্দ্বীদের সামলাতে সামরিক শক্তি, বিশেষ করে বায়ুসেনার ব্যবহারে অনিচ্ছুক ছিল ভারত।

অধিকৃত কাশ্মীর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৯৪৭ সালে যখন হামলাকারীদের পাল জম্মু ও কাশ্মীরে আঘাত হানল, তখন কিন্তু ভারতীয় বায়ুসেনার পরিবহণ বিমানগুলিই জওয়ানদের রসদ সহ যুদ্ধের ময়দানে পৌঁছতে সাহায্য করেছিল। কিন্তু সামরিক সমাধানের সম্ভাবনা থাকলেও, আমার মতে, ন্যায়-নীতির পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে আমরা সেদিকে না গিয়ে ইস্যুটার শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য রাষ্ট্রসঙ্ঘে গেলাম। তবে সমস্যাটা আজও বহাল গায়ে কাঁটার মতো বিঁধে রয়েছে।

১৯৬২ সালে সংঘর্ষের আশঙ্কায় বায়ুসেনাকে তার ক্ষমতা, শক্তির তুলনায় কম ব্যবহার করা হয়েছে বলেও অভিমত জানান বিমান বাহিনীর প্রধান

আক্ষেপের সুরে বলেন, ১৯৬৫-র সংঘর্ষে পূর্ব পাকিস্তান থেকে পাক বায়ুসেনা আমাদের বিমানঘাঁটি, পরিকাঠামোর ওপর আক্রমণ করলেও রাজনৈতিক কারণে আমরা বিমান বাহিনীকে ব্যবহার করিনি। আমরা প্রচুর মার খেয়েছি, ক্ষতি হয়েছে, তা সত্ত্বেও কখনই প্রত্যাঘাত করিনি। একমাত্র ১৯৭১-এই বায়ুসেনার ক্ষমতা পুরোপুরি প্রয়োগ করা হয়েছিল। এবং সামরিক বাহিনীর তিন শাখাই একেবারে জোট বেঁধে বাংলাদেশের সৃষ্টিতে বিরাট ভূমিকা নিয়েছিল।

তিনি এও বলেন, এখন যদিও পরিস্থিতি বদলেছে। এখন আমরা নিজেদের রক্ষা ও সংঘাত মোকাবিলায় বায়ুসেনার শক্তি পুরোপুরি কাজে লাগাতে তৈরি।