নয়াদিল্লি: প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। ভারতীয় রাজনীতিতে অবসান হল একটা যুগের। থেমে গেল পাঁচ দশকের রাজনৈতিক সফর।    প্রণব মুখোপাধ্যায় আজীবন বিশ্বাস করতেন, সংখ্যার জেরে কখনও সরকার চালানো যায় না। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়াই গণতন্ত্রের মূল স্পিরিট।

এই কারণেই তিনি ছিলেন রাজনীতির অজাতশত্রু। নিজের দল হোক বা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, প্রত্যেকের কাছে প্রণব মুখোপাধ্যায় ছিলেন সমান সম্মানীয়। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ তাঁকে ডাকতেন স্যর বলে।

আবার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে তিনি ছিলেন প্রণব’দা।

কংগ্রেসের কট্টর বিরোধী হলেও, বারবার প্রণব মুখোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক বোধের প্রশংসা শোনা গিয়েছে নরেন্দ্র মোদির গলায়।

প্রণব মুখোপাধ্যায়ের রাজনীতি কোনওদিন দল-মতের সংকীর্ণ গণ্ডিতে আটকে থাকেনি। তাই ইউপিএ সরকার ক্ষমতায় আসার পরে জর্জ ফার্নান্ডেজকে তহেলকা-কাণ্ডে ‘ক্লিন চিট’ দেওয়ার পিছনে বড় ভূমিকা ছিল প্রণবের।

এনডিএ-জমানায় তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী অরুণ জেটলিকে ‘গ্যাট’ চুক্তির বিষয়ে সব ধরনের সাহায্য করেছিলেন তিনি।

ব্যক্তিগত ভাবে তাঁর সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল লালকৃষ্ণ আডবাণীর।

প্রণব-কন্যা শর্মিষ্ঠার নাচের অনুষ্ঠানে একাধিক বার দেখা গিয়েছে আডবাণী-পরিবারকে।

এমনকী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বিচক্ষণতার কথা মাথায় রেখে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন নিয়মিত ভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান প্রণববাবুর কাছে পরামর্শ নিতেও দ্বিধা করেননি আডবাণী।

সংসদে দাঁড়িয়ে দীর্ঘদিনের সতীর্থ প্রণব মুখোপাধ্যায়কে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন তিনি।

সরকারে থাকাকালীনও,  প্রণব মুখোপাধ্যায় বিরোধীদের অন্যতম পছন্দের নেতা ছিলেন কারণ, তিনি বরাবরই বিশ্বাস করতেন, সংখ্যার জোরে সরকার চালানো য়ায় না। ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়াটাই আসল।

তবে প্রতিপক্ষ শিবিরের যে নেতার সঙ্গে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সম্পর্ক সবথেকে মধুর ছিল। তিনি হলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী।

একটা সময়ে ল্যুটিয়েন্স দিল্লিতে পাশাপাশি বাংলোয় থাকতেন প্রণব এবং বাজপেয়ী।

পরস্পরের বাংলোয় যাতায়াতের সুবিধার জন্য মাঝখানে একটি বিশেষ গেট তৈরি করিয়ে নিয়েছিলেন তাঁরা। সংসদে কোনও ইস্যুতে তুমুল তর্ক-বিতর্কের পর ঘরে ফিরে দু’জনে বসতেন আড্ডায়।

২০১৮ সালে চলে গিয়েছেন অটলবিহারী বাজপেয়ী। সোমবার চলে গেলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়ও।