নয়াদিল্লি: ভারতীয় সংবিধানের ২১ নম্বর অনুচ্ছেদে জীবন ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানেই মানুষের মর্যাদা ও অধিকারের কথা বলা হয়েছে। গোপনীয়তা মর্যাদা নিশ্চিত করে। এটাই জীবনের মর্যাদা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করার মূলে। আজ গোপনীয়তার অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়ে এমনই মন্তব্য করল সুপ্রিম কোর্ট।

৯ সদস্যের বেঞ্চের সদস্য প্রধান বিচারপতি জে এস খেহর, বিচারপতি আর কে অগ্রবাল, বিচারপতি এস এ নাজির ও বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় বলেছেন, সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ে মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। সেখানেই স্বাধীনতা ও মর্যাদা প্রসঙ্গে বিভিন্নভাবে গোপনীয়তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বিচারপতি চন্দ্রচূড় নিজের এবং অন্য তিন বিচারপতির হয়ে আলাদাভাবে যে রায় দিয়েছেন সেখানে লেখা হয়েছে, গোপনীয়তা রক্ষা করা একজনের ব্যক্তিস্বাধীনতা। একজন ব্যক্তিকে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি নিয়ন্ত্রণ করার অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য মৌলিক অধিকারগুলির মতোই গোপনীয়তার অধিকারও শর্তহীন নয়।

বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের বাবা প্রাক্তন বিচারপতি ওয়াই ভি চন্দ্রচূড় ১৯৭৬ সালে এডিএম জব্বলপুর বনাম শিবকান্ত শুক্ল মামলায় গোপনীয়তার বিষয়ে যে রায় দিয়েছিলেন, সেটা আজ খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আজ বিচারপতিরা বলেছেন, তথ্যের গোপনীয়তা বজায় রাখার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া উচিত কেন্দ্রীয় সরকারের। এর ফলে ব্যক্তিস্বাধীনতা ও রাষ্ট্রের উদ্বেগের বিষয়ে সতর্কতা ও সংবেদনশীল সমতা থাকবে। রাষ্ট্রের লক্ষ্য জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষা, অপরাধ দমন ও তদন্ত, উদ্ভাবনে উৎসাহ দেওয়া, জ্ঞানের বিস্তার এবং জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের সুবিধার অপচয় রোখা। তথ্যের নিরাপত্তা রক্ষা করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার সময় এগুলি মাথায় রাখা উচিত কেন্দ্রের।

৫৪৭ পাতার রায়ে সুপ্রিম কোর্ট আরও বলেছে, গোপনীয়তার অধিকারের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার অর্থ সংবিধান সংশোধন নয়। সংসদকে যে সাংবিধানিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে না আদালত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সংবিধানও বদলানো উচিত। যে সময় সংবিধান গ্রহণ করা হয়েছিল, সেখানেই স্থির থাকলে হবে না। আজ প্রযুক্তির উন্নতির ফলে যে আশঙ্কাগুলি তৈরি হয়েছে, সেগুলি সাত দশক আগে ছিল না। তাই ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে সংবিধানের প্রাথমিক বৈশিষ্ট্যগুলি মাথায় রাখতে পারে সেটি নিশ্চিত করার জন্য নমনীয়তা দরকার।