তিরুঅনন্তপুরম: কসাইয়ের উদ্দেশ্যে বাজার থেকে গবাদি পশু কেনাবেচার উপর কেন্দ্রীয় সরকারের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে ‘বিফ ফেস্টিভ্যাল’-এর আয়োজন করল কেরলের রাজনৈতিক দলগুলি। তারা রাস্তার ধারে গোমাংস রান্না করে খেয়ে প্রতিবাদ জানাল।


গবাদি পশু নিয়ে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কেরলের শাসক দল সিপিএম-এর পাশাপাশি বিরোধী কংগ্রেসও বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। তিরুঅনন্তপুরমে রাজ্য সচিবালয়ের কাছেই ‘বিফ ফেস্টিভ্যাল’ আয়োজন করে সিপিএম-এর যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই। কোল্লাম জেলায় কংগ্রেসও ‘বিফ ফেস্টিভ্যাল’ আয়োজন করে। কোচিতে কেরলের পর্যটন মন্ত্রী কাডাকাম্পালি সুরেন্দ্রনও গোমাংস উৎসবে যোগ দেন। ইদুক্কি জেলায় মহিষের মাথা নিয়ে প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করা হয়। সোমবার কেরলে কালা দিবস পালনের ডাক দিয়েছে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ।

কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন, পুদুচেরির মুখ্যমন্ত্রী ভি নারায়ণস্বামীও এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব। পশ্চিমবঙ্গ সরকারও কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় সরব। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর বিরোধী। কেন্দ্র তাঁদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেনি। তাঁদের অবস্থান স্পষ্ট। কেন্দ্র নির্দেশিকা পাঠালে তাঁরা পরবর্তী পদক্ষেপ করবেন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিয়ে তাঁর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন বিজয়ন। তিনি বলেছেন, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। রাজ্যের অধিকারে অনৈতিকভাবে নাক গলাচ্ছে কেন্দ্র। এই কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে রাজ্যগুলির সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল।

বিজয়নের সুরেই নারায়ণস্বামী বলেছেন, মানুষের খাদ্যাভ্যাসের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার কোনও অধিকার নেই কেন্দ্রের। এই সিদ্ধান্ত স্বৈরতান্ত্রিক। মানুষের পছন্দমতো খাবার অধিকার কেড়ে নিচ্ছে কেন্দ্র।

প্রাক্তন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এবং কেরলের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এ কে অ্যান্টনির দাবি, কেন্দ্রের এই নির্দেশিকা ছিঁড়ে ফেলে দেওয়া উচিত। তামিলনাড়ুর বিরোধী দলগুলিও গবাদি পশু নিয়ে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে। ডিএমকে-র কার্যনির্বাহী সভাপতি এম কে স্ট্যালিন বলেছেন, মানুষের খ্যাদ্যাভ্যাসের স্বাধীনতা ছেঁটে ফেলা উচিত নয়। দেশের বহুত্ববাদের স্বার্থে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেওয়া উচিত।

কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রী মানেকা গাঁধী এবং প্রাণী অধিকার সংগঠনগুলির সদস্যরা অবশ্য কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। মানেকা বলেছেন, গত ১৫ বছর ধরে কসাইরা কৃষক সেজে গবাদি পশু কিনে নিয়ে গিয়ে তাদের জবাই করছে। তাই কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত যথার্থ। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নাইডু বলেছেন, কেন্দ্রের এই পদক্ষেপের সঙ্গে ধর্মের যোগ খোঁজা উচিত নয়। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উত্তরপ্রদেশের গোশালার কর্তা-ব্যক্তিদের দাবি, অনেকদিন আগেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের ফলে গরু চুরি ও পাচার বন্ধ করা সহজ হবে।